
বাংলা নাটক ও যাত্রার ধারা – একাদশ শ্রেণীর বাংলা প্রশ্ন ও উত্তর
WB Class 11 Bengali Bangla Natok o Jatrar Dhara Question and Answer PDF
বাংলা নাটক ও যাত্রার ধারা – একাদশ শ্রেণীর বাংলা প্রশ্ন ও উত্তর | WB Class 11 Bengali Bangla Natok o Jatrar Dhara Question and Answer PDF : বাংলা নাটক ও যাত্রার ধারা – একাদশ শ্রেণীর বাংলা সাজেশন ও অধ্যায় ভিত্তিতে প্রশ্নোত্তর নিচে দেওয়া হল। এবার পশ্চিমবঙ্গ একাদশ শ্রেণির বাংলা পরীক্ষায় (WB Class 11 Bengali Bangla Natok o Jatrar Dhara Question and Answer PDF | West Bengal Class 11 Bengali Bangla Natok o Jatrar Dhara Question and Answer PDF | WBCHSE Board Class 11th Bengali Question and Answer with PDF file Download) এই প্রশ্নউত্তর ও সাজেশন খুব ইম্পর্টেন্ট। আপনারা যারা আগামী একাদশ শ্রেণীর বাংলা পরীক্ষার জন্য বা একাদশ শ্রেণির বাংলা | WB Class 11 Bengali Bangla Natok o Jatrar Dhara Question and Answer PDF | WBCHSE Board WB Class 11th Bengali Suggestion Question and Answer খুঁজে চলেছেন, তারা নিচে দেওয়া প্রশ্ন ও উত্তর ভালো করে পড়তে পারেন।
বাংলা নাটক ও যাত্রার ধারা – একাদশ শ্রেণীর বাংলা প্রশ্ন ও উত্তর | পশ্চিমবঙ্গ একাদশ শ্রেণির বাংলা সাজেশন/নোট (West Bengal Class 11th Bengali / WBCHSE Class 11 Bengali Bangla Natok o Jatrar Dhara Question and Answer PDF)
পশ্চিমবঙ্গ একাদশ শ্রেণীর বাংলা সাজেশন (West Bengal Class 11th Bengali Suggestion PDF / Notes / Class 11 Bengali Bangla Natok o Jatrar Dhara Question and Answer) বাংলা নাটক ও যাত্রার ধারা প্রশ্ন উত্তর MCQ প্রশ্নোত্তর, অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর (SAQ), সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর (Short Question and Answer), ব্যাখ্যাধর্মী বা রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর (descriptive question and answer) এবং PDF ফাইল ডাউনলোড লিঙ্ক নিচে দেওয়া রয়েছে।
বাংলা নাটক ও যাত্রার ধারা
সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর | বাংলা নাটক ও যাত্রার ধারা – একাদশ শ্রেণীর বাংলা প্রশ্ন ও উত্তর | WB Class 11 Bengali Bangla Natok o Jatrar Dhara SAQ Question and Answer :
- আঠারো শতকের শেষ এবং উনিশ শতকের গোড়ায় যাত্রার পুনর্বিকাশ ঘটার ক্ষেত্রে কার অবদান ছিল আলোচনা করো।
Answer: আঠারো শতকের শেষ এবং উনিশ শতকের গোড়ায় বাংলা যাত্রার যে পুনর্বিকাশ হয় তার কৃতিত্ব সবথেকে বেশি শিশুরাম অধিকারীর।
তিনি ছিলেন ‘কালীয় দমন’ যাত্রার প্রবর্তক। তাঁর দুই ছাত্র শ্রীদাম সুবল এবং পরমানন্দ-ও বাংলা যাত্রার এই পুনর্বিকাশে বিশেষ ভূমিকা নিয়েছিলেন।
- বাংলা যাত্রাপালায় মতিলাল রায়ের অবদান উল্লেখ করো।
Answer: উনিশ শতকের শেষ ভাগে মতিলাল রায় ভাঁড়ামি এবং অশ্লীলতা থেকে বাংলা যাত্রাকে মুক্ত করেন। যাত্রাকে তিনি করে তোলেন লোকশিক্ষার বাহন। রামায়ণ এবং মহাভারতের কাহিনিই তাঁর যাত্রাপালার বিষয় ছিল।
- বাংলা যাত্রাপালায় মুকুন্দদাসের অবদান উল্লেখ করো।
Answer: বিংশ শতাব্দীতে ধার্মিক-পৌরাণিক পালার পরিবর্তে সাধারণ মানুষ যে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠল সেখানে মুকুন্দদাস অন্যতম পুরোধা। স্বদেশচেতনার বিস্তার, পাশাপাশি জমিদার-মহাজনদের বিরুদ্ধে ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে তাঁর রচনায়।
- বাংলা যাত্রাপালায় ব্রজেন্দ্রকুমার দে-র অবদান উল্লেখ করো।
Answer: ব্রজেন্দ্রকুমার দে বাংলা যাত্রাপালাকে পুরাণের বাইরে নিয়ে আসেন।
মন্বন্তরের পটভূমিকায় ব্রজেন্দ্রকুমার দে রচনা করেন ‘আকালের দেশ’, ৪৬-এর দাঙ্গার পরিপ্রেক্ষিতে ‘শেষ নমাজ’, প্রাদেশিকতা ও বিচ্ছিন্নতার বিরুদ্ধে ‘ধর্মের বলি’, ‘গাঁয়ের মেয়ে’ ইত্যাদি যাত্রাপালা।
- বাংলা যাত্রায় প্রথম মহিলা অভিনেত্রী কে? তিনি কোন্ পালায় অভিনয় করেছিলেন?
Answer: বাংলা যাত্রায় প্রথম মহিলা অভিনেত্রী হলেন জ্যোৎস্না দত্ত।
তিনি ব্রজেন্দ্রকুমার দে রচিত ‘সোনাই দিঘি’ পালায় অভিনয় করেছিলেন।
- বাংলা যাত্রাপালায় উৎপল দত্তের অবদান উল্লেখ করো।
Answer: বাংলা যাত্রার ইতিহাসে উৎপল দত্ত এক গুরুত্বপূর্ণ নাম। ১৯৬৭ সালের নকশালবাড়ি আন্দোলনকে পটভূমি করে তিনি রচনা করেন ‘রাইফেল’, যেখানে গত শতকের ত্রিশের দশকের স্বাধীনতা সংগ্রাম বিষয় হয়ে ওঠে। তারপর পরাধীন ভারতের ইতিহাস নিয়ে তিনি লেখেন ‘জালিয়ানওয়ালাবাগ’, ‘অরণ্যের ঘুম ভেঙেছে’। বাংলার সন্ন্যাসী বিদ্রোহ নিয়ে তিনি রচনা করেন ‘সন্ন্যাসীর তরবারি’।
- প্রাচীন বাংলায় নাট্যাভিনয়ের নিদর্শন কোথায় পাওয়া যায়? এবং কীভাবে?
Answer: প্রাচীন বাংলায় নাট্যাভিনয়ের নিদর্শন পাওয়া যায় চর্যাপদে।
চর্যার পদকার লিখেছেন, “নাচন্তি বাজিল গাঅন্তি দেবী।/ বুদ্ধনাটক বিসস্মা হোই।” যার অর্থ বজ্রধর নাচছেন, দেবী গাইছেন, বুদ্ধনাটক বিপরীতভাবে অনুষ্ঠিত হল।-এখান থেকে সেই সময়ের নাট্যাভিনয়ের ইঙ্গিত পাওয়া যায়।
- শ্রীকৃষ্ণকীর্তন-এ নাট্যধর্মের কী পরিচয় পাওয়া যায়?
Answer: শ্রীকৃষ্ণকীর্তনে চরিত্রগুলির উক্তি-প্রত্যুক্তির মধ্যে নাট্যধর্ম রয়েছে। নাটকীয় দ্বন্দ্ব বা সংঘাত এই কাব্যে যথেষ্টই আছে। বিশেষভাবে ‘দান খন্ড’-এর কথা আলাদাভাবে উল্লেখযোগ্য। নাট্যকাহিনিকে সার্থক করতে যে সংগীতের প্রয়োজন তা-ও শ্রীকৃষ্ণকীর্তনে আছে।
- কলকাতায় প্রথম শখের যাত্রা দল কে তৈরি করেন এবং কোন্ পালা অভিনয়ের মাধ্যমে?
Answer: কলকাতায় প্রথম শখের যাত্রাদল তৈরি করেন রাধামোহন সরকার।
তিনি ‘বিদ্যাসুন্দর’ পালার অভিনয় করেন।
- গোপাল উড়ে কে ছিলেন?
Answer: আদতে ওড়িশার লোক গোপাল উড়ে রাধারমন সরকারের নেতৃত্বে রাজা নবকৃয়ের বাড়িতে যে যাত্রা গানের আসর বসে সেখানে মালিনির ভূমিকায় প্রথম অভিনয় ও গান করেন। পরবর্তীতে তিনি নিজের যাত্রাদল তৈরি করেন, যা ‘গোপাল উড়ের যাত্রাদল’ নামে পরিচিত। বঙ্কিমচন্দ্রের ‘বিষবৃক্ষ’ উপন্যাসে গোপালের গানের কথা উল্লেখ আছে।
- একদিক খোলা মঞ্চে অভিনয়ের রীতিকে কী বলা হয়? বাংলা নাটকে এই অভিনয়রীতি প্রথম কোথায় দেখা গিয়েছিল?
Answer: একদিক খোলা মঞ্চে অভিনয় রীতিকে বলা হয় প্রসেনিয়াম থিয়েটার।
১৮৩১ খ্রিস্টাব্দে প্রসন্নকুমার ঠাকুর প্রতিষ্ঠিত হিন্দু থিয়েটারে প্রথম এই নাট্যরীতির অভিনয় হয়।
- ইংরেজি নাটকের অনুসরণ প্রবণতা প্রথম বাংলা নাটকে কোথায় দেখা যায়?
Answer: ১৮৫২ খ্রিস্টাব্দে রচিত যোগেন্দ্র গুপ্তের ‘কীর্তিবিলাস’ নাটকে ট্র্যাজেডির ধরন অনুসৃত হয়েছে। ওই একই বছরে তারাচরণ শিকদারের ‘ভদ্রার্জুন’ নাটকে দেখা গিয়েছে প্রথম কমেডি লেখার প্রয়াস।
- হরচন্দ্র ঘোষের দুটি নাটক এবং তার প্রকাশকাল উল্লেখ করো।
Answer: হরচন্দ্র ঘোষ শেকসপিয়রের ‘মার্চেন্ট অফ ভেনিস’ অবলম্বনে রচনা করেন ‘ভানুমতী চিত্তবিলাস’ (১৮৫৩ খ্রিস্টাব্দ)। মহাভারতের কাহিনি নিয়ে তিনি রচনা করেন ‘কৌরববিয়োগ’ (১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দ)।
- ‘নাটুকে রামনারায়ণ’ কাকে বলা হয়? তাঁর রচিত দুটি গ্রন্থের নাম লেখো।
Answer: রামনারায়ণ তর্করত্নকে ‘নাটুকে রামনারায়ণ’ বলা হয়।
রামনারায়ণ রচিত দুটি নাটক হল ‘কুলীনকুলসর্বস্ব’ এবং ‘রুক্মিনীহরণ’।
- মাইকেল মধুসূদন দত্তের প্রথম নাটক কী? তাঁর রচিত দুটি প্রহসনের নাম লেখো।
Answer: মাইকেল মধুসূদন দত্তের প্রথম নাটক ‘শর্মিষ্ঠা’।
মধুসূদন দত্ত রচিত দুটি প্রহসন-‘একেই কি বলে সভ্যতা?’ এবং ‘বুড়ো শালিখের ঘাড়ে রোঁ’।
- মধুসূদন দত্তের লেখা ঐতিহাসিক নাটকটির নাম কী? এই নাটকের বিষয় কী ছিল?
Answer: মধুসূদন দত্তের লেখা ঐতিহাসিক নাটকটির নাম ‘কৃষ্ণকুমারী’ (১৮৬১)।
টডের রাজস্থানের ইতিহাস থেকে সংগৃহীত কাহিনি নিয়ে রচিত এই নাটকে রাজা জয়সিংহ এবং মানসিংহের প্রতিদ্বন্দ্বিতার কারণে উদয়পুরের রাজকন্যা কৃষ্ণকুমারীর ট্র্যাজিক মৃত্যু এই নাটকের বিষয়।
- দীনবন্ধু মিত্রের প্রথম নাটকের নাম কী? তিনি কোন্ ছদ্মনামে নাটকটি লেখেন?
Answer: দীনবন্ধু মিত্রের প্রথম নাটক ‘নীলদর্পণ’ (১৮৬০ খ্রিস্টাব্দ)।
নীলদর্পণ’ নাটকটি দীনবন্ধু মিত্র রচনা করেছিলেন ‘কেনচিৎ পথিকেনাভি প্রণীতম্’ ছদ্মনামে।
- প্রকাশকাল-সহ দীনবন্ধু মিত্র রচিত দুটি প্রহসনের নাম লেখো।
Answer: দীনবন্ধু মিত্র রচিত দুটি প্রহসনের নাম ‘বিয়ে পাগলা বুড়ো’ (১৮৬৬ খ্রিস্টাব্দ) এবং ‘সধবার একাদশী’ (১৮৬৬ খ্রিস্টাব্দ)।
- রাজকৃষ্ণ রায় রচিত শ্রেষ্ঠ নাটকটির নাম কী? কোন্ কারণে এই নাটকটি বিশিষ্ট হয়ে আছে?
Answer: রাজকৃয় রায় রচিত নাটকটির নাম ‘হরধনুভঙ্গ’।
এই নাটকে নাট্যকার ভাঙা অমিত্রাক্ষর ছন্দের সার্থক প্রয়োগ ঘটিয়েছেন, যা পরবর্তীতে কিছুটা পরিবর্তিত হয়ে গৈরিশ ছন্দ হয়ে উঠবে।
- জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের দুটি ঐতিহাসিক নাটক এবং দুটি প্রহসনের নাম লেখো।
Answer: জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের দুটি ঐতিহাসিক নাটক হল ‘পুরুবিক্রম’ এবং ‘সরোজিনী’।
জ্যোতিরিন্দ্রনাথ রচিত দুটি প্রহসন হল ‘অলীকবাবু’ এবং ‘হঠাৎ নবাব’।
- বাংলা ভক্তিরসাশ্রয়ী নাটকের শ্রেষ্ঠ রচয়িতা কে? তাঁর রচিত দুটি পৌরাণিক নাটকের নাম লেখো।
Answer: বাংলা ভক্তিরসাশ্রয়ী নাটকের শ্রেষ্ঠ রচয়িতা গিরিশচন্দ্র ঘোষ।
গিরিশচন্দ্র রচিত দুটি পৌরাণিক নাটকের নাম ‘চৈতন্যলীলা’ এবং ‘জনা’।
- প্রকাশকাল-সহ গিরিশচন্দ্রের একটি সামাজিক নাটক এবং একটি প্রহসনের নাম উল্লেখ করো।
Answer: গিরিশচন্দ্র রচিত বিখ্যাত সামাজিক নাটক ‘প্রফুল্ল’ (১৮৯১ খ্রিস্টাব্দ)।
তাঁর রচিত একটি বিখ্যাত প্রহসন ‘বেল্লিক বাজার’ (১৮৮৬ খ্রিস্টাব্দ)।
- দ্বিজেন্দ্রলাল রচিত দুটি ঐতিহাসিক নাটক এবং দুটি প্রহসনের নাম লেখো।
Answer: দ্বিজেন্দ্রলাল রচিত দুটি ঐতিহাসিক নাটক ‘মেবার পতন’ এবং ‘সাজাহান’।
দ্বিজেন্দ্রলাল-এর দুটি প্রহসন হল ‘কল্কি অবতার’ এবং ‘পুনর্জন্ম’।
- জাতীয় রঙ্গালয়ের উদ্বোধন হয়েছিল কত খ্রিস্টাব্দে? এখানে প্রথম কোন্ নাটকের অভিনয় হয়?
Answer: জাতীয় রঙ্গালয়ের উদ্বোধন হয়েছিল ১৮৭২ খ্রিস্টাব্দে।
দীনবন্ধু মিত্রের ‘নীলদর্পণ’ নাটকের অভিনয়ের মধ্য দিয়ে জাতীয় রঙ্গালয়ের উদ্বোধন হয়েছিল।
- রবীন্দ্রনাথের দুটি গীতিনাট্য ও তাদের প্রকাশকাল উল্লেখ করো। মারণত
Answer: রবীন্দ্রনাথের দুটি গীতিনাট্য হল ‘বাল্মিকী প্রতিভা’ (১৮৮১ খ্রিস্টাব্দ) এবং ‘মায়ার খেলা’ (১৮৮২ খ্রিস্টাব্দ)।
- কোন্ পরিপ্রেক্ষিতে গণনাট্য আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল?
Answer: প্রথম বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা, একনায়কতন্ত্র এবং ফ্যাসিবাদের বিকাশ ইত্যাদির মুখোমুখি দাঁড়িয়ে পৃথিবীজুড়ে সৃষ্টিশীল শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষেরা প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। ভারতেও এই পটভূমিতেই গণনাট্য আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল ১৯৪৩-এর মন্বন্তর এবং স্বাধীনতার জন্য দেশের মানুষের ক্রমবর্ধমান চাহিদা।
- তুলসী লাহিড়ীর লেখা দুটি উল্লেখযোগ্য নাটক এবং তাদের প্রকাশকাল উল্লেখ করো।
Answer: তুলসী লাহিড়ীর লেখা উল্লেখযোগ্য দুটি নাটক হল ‘দুঃখীর ইমান’ (১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দ) এবং ‘ছেঁড়া তার’ (১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দ)।
- কার কোন্ নাটকের মাধ্যমে গণনাট্যের সূচনা হয়েছিল? তাঁর রচিত যে নাটকটি বাংলা নাটকের ইতিহাসে নতুন যুগের সূচনা করে তার নাম লেখো।
Answer: বিজন ভট্টাচার্যের ‘আগুন’ নাটকের মাধ্যমে গণনাট্যের সূচনা হয়েছিল।
তাঁর রচিত ‘নবান্ন’ (১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দ) নাটকের মাধ্যমে বাংলা নাটকের ইতিহাসে নতুন যুগের সূচনা হয়েছিল।
- নবনাট্য আন্দোলন কী?
Answer: গণনাট্য যে নতুন নাট্য রীতি এবং পরীক্ষানিরীক্ষা নিয়ে এসেছিল তার সঙ্গে একাত্ম হয়ে কোনো বিশেষ রাজনৈতিক দর্শনের বাইরে নিয়ে গিয়ে যে নাট্যভাবনাকে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল তা-ই নবনাট্য আন্দোলন নামে পরিচিত।
- বাংলা নাটকে নবনাট্য আন্দোলনের সূচনা কে করেছিলেন? তাঁর রচিত দুটি উল্লেখযোগ্য নাটকের নাম করো।
Answer: বাংলা নাটকে নবনাট্য আন্দোলনের সূচনা করেছিলেন শম্ভু মিত্র। © তাঁর রচিত উল্লেখযোগ্য দুটি নাটক ‘রাজা অয়দিপাউস’ এবং ‘চাঁদ বণিকের পালা’।
- বাদল সরকার কোন্ ধরনের নাটকের জন্য স্মরণীয় হয়ে আছেন এবং তিনি কোন্ নাট্যদল প্রতিষ্ঠা করেন?
Answer: বাদল সরকার থার্ড থিয়েটার-এর জন্য বিখ্যাত হয়ে আছেন, যার অর্থ থিয়েটার হল বা প্রসেনিয়াম মঞ্চ থেকে নাট্যাভিনয়কে পথে কিংবা অঙ্গনে নিয়ে যাওয়া।
১৯৬৮ খ্রিস্টাব্দে বাদল সরকার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ‘শতাব্দী’ নাট্যদল।
- বাদল সরকারের নাটকের বৈশিষ্ট্য কী ছিল? তাঁর রচিত দুটি উল্লেখযোগ্য নাটকের নাম করো।
Answer: বাদল সরকারের নাটক আপাতভাবে অবিন্যাসের মধ্যে বিন্যস্ত। সেখানে কোনো সুগঠিত কাহিনি বা পরিণতি নেই, পরিবর্তে আছে ইঙ্গিতধর্মী সংলাপ, তুখোড় রাজনৈতিক কথাবার্তা এবং মানুষের দুঃখ-যন্ত্রণার প্রতিচ্ছবি।
বাদল সরকারের লেখা দুটি উল্লেখযোগ্য নাটক ‘এবং ইন্দ্রজিৎ’ ও ‘বাকী ইতিহাস’।
- ‘দ্য শেক্সপিয়রিয়ন’ নামক নাট্যদলের প্রতিষ্ঠাতা কে? তাঁর রচিত দুটি উল্লেখযোগ্য নাটকের নাম লেখো।
Answer: ‘দ্য শেক্সপিয়রিয়ন’ নামক নাট্যদলের প্রতিষ্ঠাতা উৎপল দত্ত।
উৎপল দত্ত রচিত দুটি উল্লেখযোগ্য নাটক ‘কল্লোল’ এবং ‘ব্যারিকেড’।
- অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায় প্রতিষ্ঠিত দুটি নাট্যদলের নাম লেখো এবং তাঁর রচিত যে-কোনো দুটি নাটকের নাম উল্লেখ করো।
Answer: অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায় প্রতিষ্ঠিত দুটি নাট্যদল হল ‘নান্দীকার’ এবং ‘নান্দীমুখ’।
অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত দুটি উল্লেখযোগ্য নাটক হল ‘তিন পয়সার পালা’ এবং ‘মঞ্জুরী আমের মঞ্জুরী’।
- ‘যাত্রা’ শব্দের অর্থ কী বোঝায়? কার আবির্ভাবের ফলে যাত্রা নতুন রূপ পায়?
Answer: ‘যাত্রা’ শব্দের অর্থ যাওয়া বা গমন করা।
চৈতন্যদেবের আগমনের ফলে কৃয়যাত্রার যে ব্যাপক প্রচলন হয় তার ফলে বাংলা যাত্রা এক নতুন রূপ পায়।
বিশ্লেষণধর্মী প্রশ্নোত্তর | বাংলা নাটক ও যাত্রার ধারা – একাদশ শ্রেণীর বাংলা প্রশ্ন ও উত্তর | WB Class 11 Bengali Bangla Natok o Jatrar Dhara Question and Answer :
1. বাংলা নাটকের বিকাশে নাট্যশালার ভূমিকা আলোচনা করো।
Answer: বাংলাদেশে নাট্যমঞ্চের পথিকৃৎ একজন রাশিয়ান গেরাসিম স্তেফানোভিচ লেবেদেফ। ১৭৯৫ খ্রিস্টাব্দে কলকাতার ডোমতলা (বর্তমানে এজরা স্ট্রিট)-এ তিনি প্রতিষ্ঠা করেন বেঙ্গলি থিয়েটার। The Disguise নামে একটা ইংরেজি নাটকের তিনি বাংলা অনুবাদ করেন ‘কাল্পনিক সংবদল’ নাম দিয়ে। ২৮ নভেম্বর নাটকটির প্রথম অভিনয় হয়। অভিনয় করেছিলেন বাঙালি অভিনেতা-অভিনেত্রীরা। ১৭৯৬ খ্রিস্টাব্দের ২১ মার্চ নাটকটির দ্বিতীয় ও শেষ অভিনয় হয়। এরপর সরকার ও ইংরেজদের বিরোধিতায় লেবেদেফ-এর থিয়েটার বন্ধ হয়ে যায়। এক দিক খোলা মঞ্চ অর্থাৎ প্রসেনিয়াম থিয়েটারে বাঙালির প্রথম নাট্যাভিনয় ১৮৩১ খ্রিস্টাব্দে প্রসন্নকুমার ঠাকুর প্রতিষ্ঠিত হিন্দু থিয়েটারে। ১৮৩৫ খ্রিস্টাব্দে শ্যামবাজারে নবীন বসুর বাড়িতে অভিনীত হয় দেশীয় নাটক ‘বিদ্যাসুন্দর’। এই পর্বে শ্যামবাজার থিয়েটার, জোড়াসাঁকো নাট্যশালা বা বেলগাছিয়া নাট্যশালায় যে-সমস্ত অভিনয় হত সেখানে জমিদার এবং ধনী মানুষদের পৃষ্ঠপোষকতায় নাটক মঞ্চস্থ হত, এবং তাঁদের অতিথিরাই সেই নাটক দেখার সুযোগ পেতেন। সাধারণ মানুষের সঙ্গে এই নাট্যমঞ্চগুলির কোনো যোগ ছিল না। ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দে ন্যাশনাল থিয়েটার প্রতিষ্ঠার পর সাধারণ মানুষ নিয়মিত নাটক দেখার সুযোগ পায়। এবং বাংলা থিয়েটারও বাধ্য হয় দর্শক চাহিদা ও সামাজিক দায়বদ্ধতার কথা মাথায় রাখতে। ন্যাশনাল থিয়েটারের উদ্বোধন হয়েছিল ‘নীলদর্পণ’ নাটক অভিনয়ের মধ্য দিয়ে। সূচনাপর্বেই এই নাটক ‘ইংলিশম্যান’ কাগজের সমালোচনা এবং পুলিশি নজরদারির সম্মুখীন হয়েছিল। ১৮৭৬ খ্রিস্টাব্দে বেঙ্গল থিয়েটার এবং গ্রেট ন্যাশনাল থিয়েটারে জ্যোতিরিন্দ্রনাথের ‘পুরুবিক্রম’, কিরণ বন্দোপাধ্যায়ের ‘ভারতে যবন’, হরলাল রায়ের ‘বঙ্গের সুখাবসান’ ইত্যাদি নাটক মঞ্চস্থ হয়, যা ইংরেজ সরকারের অসন্তোষের কারণ হয়েছিল। এভাবেই বাংলা নাট্যশালা তার প্রথম পর্বে জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করে নিয়েছিল।
2. বাংলা নাটকে রামনারায়ণ তর্করত্নের অবদান আলোচনা করো।
Answer: রামনারায়ণ তর্করত্ন উনিশ শতকের বাংলা নাটকের অন্যতম বিখ্যাত নাট্যকার। কৌলীন্য প্রথাকে বিদ্রুপ করে রামনারায়ণ লেখেন তাঁর প্রথম ও অত্যন্ত জনপ্রিয় নাটক ‘কুলীনকুলসর্বস্ব’ (১৮৫৪)। এটিই বাংলা নাটকের ইতিহাসে প্রথম মৌলিক নাটক। বেশ কিছু অনুবাদ নাটক রামনারায়ণ রচনা করেন, যেমন-বেণীসংহার, রত্নাবলী, অভিজ্ঞান শকুন্তল, মালতীমাধব। পুরাণকে আশ্রয় করে রামনারায়ণ রচনা করেছিলেন তাঁর তিনটি মৌলিক নাটক ‘রুক্মিণীহরণ’, ‘কংসবধ’, ‘ধর্মবিজয়’। বহুবিবাহের সামাজিক সমস্যা নিয়ে রামনারায়ণ রচনা করেন-‘নবনাটক’। প্রহসন রচনাতেও রামনারায়ণ দক্ষতা দেখিয়েছেন। তাঁর রচিত উল্লেখযোগ্য প্রহসনগুলি হল-‘যেমন কর্ম তেমনি ফল’, ‘উভয় সংকট’, ‘চক্ষুদান’ ইত্যাদি। রামনারায়ণের নাটকগুলো সেইসময়ে বেলগাছিয়া নাট্যশালা, জোড়াসাঁকো নাট্যশালার নাট্যমঞ্চে অভিনীত হত।
3. বাংলা নাটকে জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের অবদান সংক্ষেপে আলোচনা করো।
Answer: একদিকে জাতীয়তাবাদী অনুপ্রেরণা, অন্যদিকে অসাধারণ নাট্যশৈলী নাট্যকার জ্যোতিরিন্দ্রনাথকে বিশিষ্ট করে তুলেছে। প্রহসন রচনায় জ্যোতিরিন্দ্রনাথের দক্ষতা ছিল প্রশ্নাতীত। তাঁর প্রথম নাটক ‘কিঞ্চিৎ জলযোগ’ (১৮৭২)-এ স্ত্রী-স্বাধীনতার প্রতি কটাক্ষ ছিল। পরবর্তীতে অবশ্য তাঁর অবস্থান বদল হয়। দ্বিতীয় প্রহসন ‘অলীকবাবু’-তে ফরাসি নাট্যশৈলীর প্রভাব দেখা যায়। জ্যোতিরিন্দ্রনাথ রচিত অন্যান্য প্রহসনগুলি হল-‘হিতে বিপরীত’, ‘হঠাৎ নবাব’, ‘দায়ে পড়ে পরিগ্রহ’। অনুবাদ নাটক রচনাতেও জ্যোতিরিন্দ্রনাথ দক্ষতা দেখিয়েছেন। তাঁর রচিত অনুবাদ নাটকগুলি হল ‘অভিজ্ঞান শকুন্তল’, ‘মালবিকাগ্নিমিত্র’, ‘বিক্রমোর্বশী’, ‘মালতীমাধব’, ‘জুলিয়াস সীজার’। জ্যোতিরিন্দ্রনাথের মৌলিক নাটকগুলির মধ্যে রয়েছে ঐতিহাসিক নাটক ‘পুরুবিক্রম’, ‘সরোজিনী’, ‘অশ্রুমতী’, ইতিহাসাশ্রয়ী রোমান্স ‘স্বপ্নময়ী’।
4. বাংলা নাটকে শম্ভু মিত্রের অবদান বিষয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করো।
Answer: শম্ভু মিত্র আধুনিক বাংলা নাটকের কিংবদন্তি। গণনাট্যের সূচনাপর্বের অগ্রণী সৈনিক ছিলেন শম্ভু মিত্র। পরবর্তীতে মনোরঞ্জন ভট্টাচার্যের সঙ্গে ‘বহুরূপী’ নাট্যগোষ্ঠী প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে তিনি নবনাট্য আন্দোলনের সূচনা করেন। গত শতকের চল্লিশের দশকের শুরু দিকে ‘শ্রীসঞ্জীব’ ছদ্মনামে শম্ভু মিত্র রচনা করেন তাঁর প্রথম নাটক ‘উলুখাগড়া’। শম্ভু মিত্রের শ্রেষ্ঠ নাটক ‘চাঁদ বণিকের পালা’ (১৯৬৬)। মনসামঙ্গলের আধারে এই নাটক নীতিহীনতার বিরুদ্ধে, অন্ধকারের বিরুদ্ধে এক বলিষ্ঠ প্রতিবাদ। শম্ভু মিত্র রচিত অন্যান্য নাটকগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘একটি দৃশ্য’, ‘ঘূর্ণি’, ‘বিভাব’ ইত্যাদি। সফোক্লেস-এর অনুসরণে তিনি রচনা করে ‘রাজা অয়দিপাউস’, ইবসেনের অনুসরণে ‘পুতুল খেলা’। নির্দেশক এবং অভিনেতা শম্ভু মিত্রের সঙ্গে নাট্যকার শম্ভু মিত্রও বাংলা নাটকের ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।
5. মধুসূদন দত্তের নাটকগুলির উল্লেখ করে তাঁর রচিত প্রহসনগুলির সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।
Answer: বিষয়বস্তুর ওপর নির্ভর করে মধুসূদনের নাটকগুলিকে মোট তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায়:
১. পৌরাণিক নাটক: শর্মিষ্ঠা (১৮৫৯ খ্রি.), পদ্মাবতী (১৮৬০ খ্রি.)
২. ঐতিহাসিক নাটক: কৃষ্ণকুমারী (১৮৬১ খ্রি.)
৩. প্রহসন: একেই কি বলে সভ্যতা? (১৮৬০ খ্রি.), বুড়ো শালিখের ঘাড়ে রোঁ (১৮৬০ খ্রি.)। একেই কি বলে সভ্যতা?র মধ্যে তিনি সেকালের উচ্চশিক্ষিত কিন্তু উচ্ছৃঙ্খল নব্য যুবকদের স্বরূপ তুলে ধরেছেন। আর বুড়ো শালিখের ঘাড়ে রোঁ প্রহসনটির মধ্যে ফুটে উঠেছে এক গ্রাম্য জমিদার ও ধর্মগুরুদের কদর্য চরিত্র। আজও নাটক হিসেবে এই প্রহসন দুটির উপযোগিতা এতটুকু হ্রাস পায়নি।
6. দীনবন্ধু মিত্রের নাট্যরচনার বিবরণ দিয়ে বাংলা নাট্যসাহিত্যে তাঁর বিশিষ্টতা নির্দেশ করো।
Answer: বাংলা নাটকের ইতিহাসে অন্যতম সমাজসচেতন নাট্যরচয়িতা দীনবন্ধু মিত্রের নাটকগুলিকে প্রধানত তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায়:
১. সামাজিক নাটক: নীলদর্পণ (১৮৬০ খ্রি.)
২. রোমান্টিক নাটক: নবীন তপস্বিনী (১৮৬৩ খ্রি.), লীলাবতী (১৮৬৭ খ্রি.), কমলে কামিনী (১৮৭৩ খ্রি.)
৩. প্রহসন / কৌতুকধর্মী নাটক: বিয়ে পাগলা বুড়ো (১৮৬৬ খ্রি.), সধবার একাদশী (১৮৬৬ খ্রি.), জামাই বারিক (১৮৭২ খ্রি.)।
‘কেনচিৎ পথিকেনাভি প্রণীতম্’ ছদ্মনামে লেখা দীনবন্ধু মিত্রের প্রথম নাটক নীলদর্পণ এক যুগান্তকারী সৃষ্টি। এই নাটকে গ্রামবাংলার প্রজাদের ওপর নীলকর সাহেবদের অত্যাচারের চিত্র তিনি তুলে ধরেছেন। দীনবন্ধু মিত্রের নবীন তপস্বিনী, লীলাবতী এবং কমলে কামিনী প্রভৃতি নাটক ‘নীলদর্পণ’-এর তুলনায় ম্লান। সধবার একাদশী, বিয়ে পাগলা বুড়ো এবং জামাই বারিক নামে দীনবন্ধু তিনখানি প্রহসন রচনা করেন। সধবার একাদশী-তে নব্যবঙ্গ সম্প্রদায়ের উচ্ছৃঙ্খলতা ও ব্যভিচারকে বিদ্রুপ করা হয়েছে। বিয়ে পাগলা বুড়ো-তে ষাট বছরের এক বিপত্নীক বৃদ্ধ রাজীবের পুনর্বিবাহের উদ্যোগ এবং সেই কারণে যথেষ্ট নাকাল হওয়ার কৌতুকচিত্র দেখা যায়। জামাই বারিক প্রহসনটিতে বড়োলোকের বাড়িতে অলস জামাইয়ের অবস্থান এবং বিবাহিত কুলীন ব্রাহ্মণের জীবনে সতিনদের ঝগড়াজনিত বিভ্রাট চমৎকারভাবে পরিবেশিত হয়েছে।
7. সংক্ষেপে রবীন্দ্রনাথের লেখা গীতিনাট্য, কাব্যনাট্য, নৃত্যনাট্য এবং প্রচলিত রীতির পূর্ণাঙ্গ নাটকগুলির নাম লেখো।
Answer: বাংলা নাটকের ক্ষেত্রে রবীন্দ্রনাথের অবদান অনস্বীকার্য। রবীন্দ্রনাথের গীতিনাট্য, কাব্যনাট্য শ্রেণির এবং প্রচলিত রীতির পূর্ণাঙ্গ নাটকগুলি হল-
১. গীতিনাট্য, কাব্যনাট্য, নাট্যকাব্য: বাল্মীকি-প্রতিভা এবং মায়ার খেলা রবীন্দ্রনাথের দুটি উল্লেখযোগ্য গীতিনাট্য; চিত্রাঙ্গদা তাঁর একটি বহুখ্যাত কাব্যনাট্য এবং কর্ণকুন্তীসংবাদ, গান্ধারীর আবেদন প্রভৃতি রচনাকে বলা যেতে পারে নাট্যকাব্য।
২. প্রচলিত রীতির পূর্ণাঙ্গ নাটক: রাজা ও রানী, বিসর্জন, মালিনী, মুকুট, প্রায়শ্চিত্ত প্রভৃতি প্রচলিত রীতির নাটকে শেকসপিয়রের রীতিই অনুসৃত হয়েছে। রাজা ও রানী-তে কর্তব্যের সঙ্গে প্রেমের, বিসর্জন-এ আনুষ্ঠানিকতা ও প্রথার প্রতি আনুগত্যের সঙ্গে হৃদয়ভক্তির, মালিনী-তে ধর্মের প্রথাবদ্ধ রূপ ও উদার রূপের সংঘাতের মধ্য দিয়ে জীবনের এক আদর্শ রূপের সন্ধানে ব্রতী হয়েছেন রবীন্দ্রনাথ।
8. সংক্ষেপে রবীন্দ্রনাথের লেখা কৌতুক নাট্য এবং রূপক- সাংকেতিক নাটকগুলির উল্লেখ করো।
Answer: রবীন্দ্রনাথের লেখা উল্লেখযোগ্য কৌতুক নাট্য এবং রূপক- সাংকেতিক নাটকগুলি হল-
১. কৌতুক নাট্য: রবীন্দ্রনাথের রঙ্গব্যঙ্গ ও কৌতুকরসের রচনাগুলিতে প্রধান হয়ে উঠেছে পরিমার্জিত বুদ্ধিদীপ্ত কৌতুকের ছটা। গোড়ায় গলদ, বৈকুণ্ঠের খাতা, চিরকুমার সভা, হাস্যকৌতুক, ব্যঙ্গকৌতুক প্রভৃতি এই শ্রেণির রচনা।
২. রূপক-সাংকেতিক নাটক: রবীন্দ্রনাথের রূপক- সাংকেতিক নাটকে রূপক ও সংকেতের সাহায্যে জীবন ও জগতের বিভিন্ন দিক দেখানো হয়েছে। রাজায় অরূপের সন্ধান, অচলায়তন-এ প্রথাবদ্ধ ও প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা এবং জীবনের স্থবিরতা থেকে মুক্তি, ডাকঘর-এ নিরুদ্দেশ সৌন্দর্যের সন্ধান, মুক্তধারায় যন্ত্রসভ্যতার ওপরে মানবচৈতন্যের প্রতিষ্ঠা কিংবা রক্তকরবীতে সৌন্দর্য ও প্রাণের আহ্বান ঘোষণার মধ্য দিয়ে বাংলা নাটকে রবীন্দ্রনাথ অভিনবত্ব নিয়ে আসেন।
9. রবীন্দ্রনাথের হাস্যরসাত্মক নাটকগুলির পরিচয় দাও।
Answer: রবীন্দ্রনাথ হাসির নাটক রচনাতেও নিঃসন্দেহে শিল্পসার্থক ও মঞ্চসফল। তাঁর সেরা হাস্যরসাত্মক নাটকগুলি হল-
১. গোড়ায় গলদ: বাংলাদেশের একান্ত পারিবারিক প্রেক্ষাপটে, কৌতুক ও করুণার সমন্বয়ে সৃষ্ট একটি মধুর কমেডি হল গোড়ায় গলদ (১৮৯২ খ্রি.)।
২. বৈকুণ্ঠের খাতা: বৈকুণ্ঠের খাতা (১৮৯৭ খ্রি.) মাত্র তিন দৃশ্যের অনাবিল এক হালকা হাসির প্রহসন।
৩. হাস্যকৌতুক ও ব্যঙ্গকৌতুক: হাস্যকৌতুক পনেরোটি ছোটো ছোটো নাটকের সমষ্টি, যেগুলির মধ্যে শ্রেষ্ঠ দুটি নাটক হল খ্যাতির বিড়ম্বনা এবং রোগীর মৃত্যু। ব্যঙ্গকৌতুক গ্রন্থে নূতন অবতার, স্বর্গীয় প্রহসন-এর মতো নাটক থাকলেও এই গ্রন্থের সর্বাপেক্ষা উজ্জ্বল নাটক হল বশীকরণ।
৪. চিরকুমার সভা: চিরকুমারদের বিয়ে না করার ভয়ংকর প্রতিজ্ঞা কী করে কিশোরীদের সামান্য স্পর্শেই ভেঙে গেল-তা-ই কৌতুককরভাবে বর্ণিত হয়েছে চিরকুমার সভা (১৯২৬ খ্রি.) নাটকে।
10. রবীন্দ্রনাথের কয়েকটি রূপক-সাংকেতিক নাটক সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো।
Answer: শারদোৎসব (১৯০৮ খ্রি.), রাজা (১৯১০ খ্রি.), ডাকঘর (১৯১২ খ্রি.), অচলায়তন (১৯১২ খ্রি.), ফাল্গুনী (১৯১৬ খ্রি.), মুক্তধারা (১৯২২ খ্রি.), রক্তকরবী (১৯২৪ খ্রি.), রথের রশি (১৯৩২ খ্রি.) এবং তাসের দেশ (১৯৩৩ খ্রি.)- মোট এই নয়টি রূপক-সাংকেতিক নাটক লিখেছেন রবীন্দ্রনাথ।
১. শারদোৎসব: প্রকৃতির সঙ্গে সম্বন্ধ তৈরি হলে মানবহৃদয় কীভাবে সংকীর্ণতামুক্ত ও উদার হয়-তা-ই দেখানো হয়েছে এই নাটকে।
২. রাজা: মধুরভাবের সাধনার দৃষ্টিকোণ থেকে মানবাত্মার সঙ্গে বিশ্বাত্মার সম্পর্ক উদ্ঘাটিত হয়েছে এই নাটকে।
৩. ডাকঘর: সুদূরের প্রতি মানব মনের সুতীব্র উৎকণ্ঠা ও পিপাসা তথা মানবাত্মার সঙ্গে বিশ্বাত্মার সম্পর্ক এই নাটকের বিষয়।
৪. অচলায়তন: অচলায়তন নাটকে নিষ্ঠুর প্রথা ও প্রাণের দ্বন্দ্বের শেষে প্রাণের জয় ঘোষণা করা হয়েছে।
৫. ফাল্গুনী: শীতের মধ্য দিয়ে বসন্তের আবির্ভাব-এটাই তত্ত্বনাটক ফাল্গুনীর উপাখ্যান-ভাগ।
৬. মুক্তধারা: মুক্তধারা নাটকে যন্ত্রের উপরে বন্ধন-অসহিষু মুক্তপ্রাণের অবাধ লীলাকে জয়যুক্ত করা হয়েছে।
৭. রক্তকরবী: এই নাটকে যন্ত্রের সঙ্গে কৃষির সংঘাতে এবং পুঁজিবাদী ধনতান্ত্রিক সভ্যতার সঙ্গে শ্রমজীবী মানুষের সংঘাতে ঘোষিত হয়েছে প্রেম ও প্রাণের জয়।
৮. রথের রশি: মানবতার অপমানে মহাকালের রথ যে অচল হয়ে যায়-কবি তা-ই এই নাটকটির মধ্য দিয়ে দেখিয়েছেন।
৯. তাসের দেশ: তাসের দেশ নাটকে জড়তা থেকে মুক্তির কথা, গতির মহিমা প্রচার ও যৌবনের জয়গান করা হয়েছে।
11. বাংলা নাট্যসাহিত্যের ইতিহাসে দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের কৃতিত্ব নিরূপণ করো।
অথবা, দ্বিজেন্দ্রলালের প্রত্যেক ধারার নাটকের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দিয়ে বাংলা নাট্যসাহিত্যে তাঁর ভূমিকা কী তা বুঝিয়ে দাও।
Answer: রবীন্দ্রনাথের সমকালে আবির্ভূত নাট্যকারদের মধ্যে অন্যতম দ্বিজেন্দ্রলাল রায় (১৮৬৩-১৯১৩ খ্রি.)। দ্বিজেন্দ্রলালের নাটকগুলিকে কয়েকটি শ্রেণিতে ভাগ করা যেতে পারে-
১. প্রহসন: সমাজবিভ্রাট, কল্কি অবতার, বিরহ, এ্যহস্পর্শ, প্রায়শ্চিত্ত, পুনর্জন্ম, আনন্দবিদায়।
২. পৌরাণিক নাটক: পাষাণী, সীতা এবং ভীষ্ম।
৩. সামাজিক নাটক: দ্বিজেন্দ্রলালের দুটি সামাজিক নাটক-পরপারে এবং বঙ্গনারী।
৪. ঐতিহাসিক নাটক: দুর্গাদাস, নূরজাহান, মেবার পতন, সাজাহান প্রভৃতি দ্বিজেন্দ্রলালের উল্লেখযোগ্য ঐতিহাসিক নাটক। হিন্দু যুগের পটভূমিতে তিনি রচনা করেছেন চন্দ্রগুপ্ত এবং সিংহল বিজয়।
৫. অপেরাধর্মী নাটক: দ্বিজেন্দ্রলালের একটিমাত্র অপেরাধর্মী নাটক সোরাব-রুস্তম।
বাংলা নাটকে দ্বিজেন্দ্রলালের প্রধান কৃতিত্ব নাট্যভাষা ও গদ্য-সংলাপ সৃষ্টিতে। তিনি তাঁর নাটকে স্বগতোক্তি বাদ দিয়ে চরিত্রদের অন্তর্দ্বন্দ্ব রচনার মাধ্যমে নাট্য-আবেদন সৃষ্টিতে সচেষ্ট থেকেছেন। ভক্তিপ্রাধান্য এবং আবেগসর্বস্বতা থেকে বাংলা নাটককে মুক্ত করার কৃতিত্ব দ্বিজেন্দ্রলালেরই প্রাপ্য। নাটকের সংলাপে কাব্যগুণ সংযোগ করাই হল তাঁর অন্যতম প্রধান কৃতিত্ব।
12. বাংলা নাটকে ক্ষীরোদপ্রসাদ বিদ্যাবিনোদের অবদান সম্পর্কে আলোচনা করো।
অথবা, সংক্ষেপে নাট্যকার বিদ্যাবিনোদের পরিচয় দাও। ক্ষীরোদপ্রসাদ
Answer: বাংলা নাটকের ইতিহাসে ক্ষীরোদপ্রসাদ বিদ্যাবিনোদ নাটকের সাহিত্যগুণের থেকেও বেশি গুরুত্ব দিয়েছিলেন নাটকের মঞ্চসাফল্যের দিকে। তাঁর নাটকগুলিকে কয়েকটি শ্রেণিতে ভাগ করা যেতে পারে-
১. পৌরাণিক নাটক: ক্ষীরোদপ্রসাদ বিদ্যাবিনোদ পৌরাণিক কাহিনি অবলম্বনে রচনা করেন সাবিত্রী, উলুপী, ভীষ্ম, মন্দাকিনী ও নরনারায়ণ।
২. ঐতিহাসিক নাটক: বঙ্গের প্রতাপাদিত্য, চাঁদবিবি, পলাশীর প্রায়শ্চিত্ত, নন্দকুমার, বাঙ্গালার মসনদ, আলমগীর প্রভৃতি ক্ষীরোদপ্রসাদের উল্লেখযোগ্য ঐতিহাসিক নাটক।
৩. ইতিহাস-আশ্রিত কাল্পনিক নাটক: ক্ষীরোদপ্রসাদ ইতিহাসের আশ্রয়ে কয়েকটি কাল্পনিক নাটক রচনা করেন, সেগুলি হল-রঘুবীর, খাঁজাহান, আহেরিয়া এবং বঙ্গে রাঠোর।
৪. গীতিনাট্য: গীতিনাট্য রচনার মধ্য দিয়েও এই নাট্যকার যথেষ্ট জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন। বহুবাহন, আলিবাবা, জুলিয়া, সপ্তম প্রতিমা, আলাদিন, দৌলতে দুনিয়া, রূপের ডালি, বাদশাজাদী প্রভৃতি তাঁর উল্লেখযোগ্য গীতিনাট্য। আরব্য রজনির কাহিনি অবলম্বনে রচিত নৃত্য-গীত সংবলিত আলিবাবা (১৮৯৭ খ্রি.) নাটকটি ক্ষীরোদপ্রসাদকে খ্যাতির শিখরে নিয়ে গিয়েছিল। বাংলা নাটকের ইতিহাসে ক্ষীরোদপ্রসাদের জনপ্রিয়তার মূল কারণ তাঁর গীতিনাটকগুলি।
13. বিজন ভট্টাচার্যের নাট্যরচনার সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।
Answer: গণনাট্য আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃৎ নাট্যকার-অভিনেতা বিজন ভট্টাচার্যের নাটকগুলিকে মোটামুটি চারটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায়-
১. পূর্ণাঙ্গ নাটক: নবান্ন (১৯৪৪ খ্রি.), জতুগৃহ (১৯৫১ খ্রি.), গোত্রান্তর (১৯৫৬-৫৭ খ্রি.), ছায়াপথ (১৯৬১ খ্রি.), দেবীগর্জন (১৯৪৪ খ্রি.), ধর্মগোলা (১৯৬৭ খ্রি.), গর্ভবতী জননী (১৯৭১ খ্রি.) ইত্যাদি হল তাঁর বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পূর্ণাঙ্গ নাটক। ১৯৪২-এর আগস্ট আন্দোলন, বন্যা, মহামারি এবং ভয়ংকর দুর্ভিক্ষের পটভূমিতে রচিত নবান্ন নাটকে বিজন ভট্টাচার্য দেখিয়েছেন যে, মানুষেরই শোষণ ও অত্যাচারে কীভাবে হাজার হাজার মানুষের অপমৃত্যু ঘটে। গোত্রান্তর নাটকের বিষয় উদ্বাস্তু জীবনের সমস্যা, ছায়াপথ-এর বিষয় ফুটপাথের ঝুপড়িবাসীদের জীবন, কৃষক আন্দোলনের পটভূমিতে রচিত হয়েছে দেবীগর্জন।
২. একাঙ্ক নাটক: আগুন (১৯৪৩ খ্রি.), জবানবন্দি (১৯৪৩ খ্রি.), জননেতা (১৯৫০ খ্রি.), লাস ঘুইর্যা যাউক (১৯৭০ খ্রি.) প্রভৃতি হল বিজন ভট্টাচার্যের উল্লেখযোগ্য একাঙ্ক নাটক। আগুন ও জবানবন্দি নাটক দুটিতে স্থান পেয়েছে বাংলার কৃষকদের দুর্দশার চিত্র।
৩. গীতিনাট্য: জীয়ন কন্যা (১৯৪৮ খ্রি.) বিজন ভট্টাচার্যের একমাত্র গীতিনাট্য। এটি মনসার ভাসান বিষয়ক একটি গীতিনাট্য।
জীবন সম্পর্কে প্রবল আশাবাদ, আদর্শবাদ এবং রাজনৈতিক চেতনার আলোয় বাংলা নাটককে জনগণের কাছে নিয়ে যাওয়ার সার্বিক কৃতিত্ব বিজন ভট্টাচার্যের প্রাপ্য।
14. বিজন ভট্টাচার্য রচিত একটি নাটকের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।
Answer: বিশ শতকের চারের দশকের বাংলার গণনাট্য আন্দোলনের পথিকৃৎ বিজন ভট্টাচার্য বাংলা নাটকের ইতিহাসে এক স্মরণীয় ব্যক্তিত্ব। বাংলা পেশাদারি রঙ্গমঞ্চে যখন শিশির ভাদুড়ি নাট্যজগৎ-কে শাসন করছিলেন, তেমনই এক সময়ে, ১৯৪২-এর আগস্ট আন্দোলন এবং ১৯৪৩-৪৪-এর দেশব্যাপী মন্বন্তরের পটভূমিতে বিজন ভট্টাচার্যের আবির্ভাব। পূর্ব-প্রচলিত নাট্যধারার গতানুগতিক পথে না হেঁটে তিনি বাংলা নাটককে করে তুলেছেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর কঠিন বাস্তবজীবনের অনুসারী।
আগুন, জবানবন্দি, গোত্রান্তর, ছায়াপথ, মাস্টারমশাই, দেবীগর্জন, ধর্মগোলা, গর্ভবতী জননী প্রভৃতি বিভিন্ন শিল্পসার্থক নাটকের রচয়িতা বিজন ভট্টাচার্য (১৯১৫-১৯৭৮ খ্রি.) অমর হয়ে আছেন তাঁর নবান্ন (১৯৪৪ খ্রি.) নাটকের জন্য। ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দের ২৪ অক্টোবর ভারতীয় গণনাট্য সংঘের প্রযোজনায় ‘শ্রীরঙ্গম’ রঙ্গমঞ্চে প্রথম অভিনীত হওয়া এই নাটকটি বিষয়বস্তুর অভিনবত্বে এবং অভিনয় নিপুণতায় বাংলা নাট্যজগতে বিপুল আলোড়ন তুলেছিল। ১৯৪২- এর আগস্ট আন্দোলন, বন্যা, মহামারি এবং ভয়ংকর দুর্ভিক্ষের পটভূমিতে রচিত এই নাটকে বিজন ভট্টাচার্য দেখিয়েছেন যে, মানুষেরই শোষণ ও অত্যাচারে কীভাবে হাজার হাজার মানুষের অপমৃত্যু ঘটে। নবান্ন নাটকের মধ্য দিয়েই সমকালীন নাট্য-আন্দোলন দেশব্যাপী গণ-আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল।
15. বাংলা নাটকে বিজন ভট্টাচার্যের কৃতিত্ব আলোচনা করো।
Answer: বাংলা নাটকে বিজন ভট্টাচার্যের কৃতিত্ব হল-প্রথমত, তাঁর নাটকে কৃষক, শ্রমিক, বস্তিবাসী, ঝুপড়িবাসী প্রভৃতি শোষিত, নিপীড়িত, নির্যাতিত শ্রেণির মানুষের সংগ্রামের কথা উঠে এসেছে এবং একই সঙ্গে প্রকাশিত হয়েছে নাট্যকারের আশাবাদী চেতনা। দ্বিতীয়ত, তাঁর নবান্ন নাটকের মধ্য দিয়েই সূচনা হয় গণনাট্য আন্দোলনের। এই গণনাট্য আন্দোলনের উদ্দেশ্য ছিল জনগণকে তাদের ন্যায়সংগত অধিকার সম্বন্ধে সচেতন করা এবং তাদের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণে সহায়তা করা। তৃতীয়ত, নবান্ন নাটকের মধ্য দিয়েই মঞ্চসজ্জা, মঞ্চনির্দেশ, মঞ্চ-উপস্থাপনা এবং অভিনয়রীতিতে বাংলা নাট্যাভিনয়ের ক্ষেত্রে এক আমূল পরিবর্তন ঘটে। সেকারণেই বাংলা নাটক ও রঙ্গমঞ্চের ইতিহাসে বিজন ভট্টাচার্যের অবদান কখনোই অস্বীকার করা যায় না।
16. নাট্যকার উৎপল দত্তের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।
Answer: নট ও নাট্যকার উৎপল দত্ত ছাত্রাবস্থায় ‘দি অ্যামেচার শেকসপিরিয়ানস’ নামে একটি থিয়েটারের দল গঠন করেন, পরে যার নাম হয় ‘লিটল থিয়েটার গ্রুপ’। প্রথম দিকে তিনি ইংরেজি নাটকের প্রযোজনা ও অভিনয়ের সঙ্গে যুক্ত থাকলেও পরবর্তীকালে তিনি গণনাট্য সংঘে যোগ দেন।
উৎপল দত্ত একদিকে যেমন বিদেশি নাটকের অনুবাদ করেছেন, অন্যদিকে তেমনই মৌলিক নাটকও রচনা করেছেন। ম্যাকবেথ, ওথেলো, জুলিয়াস সিজার, সমাধান প্রভৃতি তাঁর অনূদিত নাটক; ছায়ানট, অঙ্গার, টোটা, তিতুমীর, টিনের তলোয়ার, মানুষের অধিকার, ব্যারিকেড, ফেরারী ফৌজ, কল্লোল, তীর, শৃঙ্খল ঝঙ্কার, পান্ডবের অজ্ঞাতবাস, নীল সাদা লাল, লাল দুর্গ, জনতার আফিম প্রভৃতি তাঁর মৌলিক নাটক। এইসব নাটকে উৎপীড়িত মানুষের যন্ত্রণা ও প্রতিবাদ মূর্ত হয়ে উঠেছে।
17. উৎপল দত্তের নাটকগুলির সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।
Answer: গণমুখী চেতনা নিয়ে উৎপল দত্ত নাটক ও যাত্রাপালা লিখেছিলেন। বিহারের ধানবাদ অঞ্চলের কয়লাখনি দুর্ঘটনাকে অবলম্বন করে লেখা অঙ্গার, ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দের বিপ্লবী আন্দোলনের পটভূমিতে লেখা ফেরারী ফৌজ বা ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দের নৌবিদ্রোহের পটভূমিকায় লেখা কল্লোল উৎপল দত্তকে বাংলা নাটকে চিরস্থায়ী জায়গা দিয়েছে। তাঁর টিনের তলোয়ার নাটকে উনিশ শতকের আমোদপ্রিয় বাবুদের বিরুদ্ধে মঞ্চশিল্পীদের প্রতিবাদের কাহিনি প্রতিফলিত হয়েছে। ছায়ানট নাটকে চিত্রনির্মাতাদের আশা-আকাঙ্ক্ষার কথা; ব্যারিকেড নাটকে হিটলারের নাৎসি বাহিনীর বিরুদ্ধে কমিউনিস্টদের আত্মরক্ষার ইতিহাস; তীর, তিতুমীর ও টোটা নাটকে যথাক্রমে আদিবাসী বিদ্রোহ, ফকির বিদ্রোহ ও সিপাহি বিদ্রোহ বর্ণিত হয়েছে। স্বাধীনতার স্বপ্নপূরণে অক্ষম ভারত সরকারের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের মনে জমে ওঠা ক্ষোভ এবং শাসকদের দমন-পীড়নকে অবলম্বন করে রচিত তাঁর দুঃস্বপ্নের নগরী নাটকটি একসময় নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়েছিল। উৎপল দত্ত নাটককে শুধু শিল্পরূপে দেখেননি তিনি, নাটক তাঁর কাছে হয়ে উঠেছিল আন্দোলনের, প্রতিবাদের, প্রতিরোধের অন্যতম হাতিয়ার।
18. প্রাচীন ও মধ্যযুগে বাংলা যাত্রাপালার যে পরিচয় পাওয়া যায় তা নিজের ভাষায় লেখো।
Answer: বাংলা সাহিত্যের প্রথম নিদর্শন চর্যাপদ-এ ‘বুদ্ধনাটক বিস্মা হোই’ পদে যে নাট্যরীতির উল্লেখ আছে, তা যাত্রারই সমধর্মী। বাংলা ভাষার আদি মধ্যযুগের একমাত্র নিদর্শন শ্রীকৃয়কীর্তন কাব্যে তিনটি চরিত্রের উক্তি-প্রত্যুক্তিমূলক যে বিথী নাটকের উল্লেখ আছে, সেটিও যাত্রার আঙ্গিকের প্রায় কাছাকাছি। চৈতন্যদেবের আবির্ভাবের পর বাংলা দেশজুড়ে কৃয়যাত্রা ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল, যা অষ্টাদশ শতকের শেষে এসে নিম্নরুচি ও স্থূল ভাঁড়ামিতে পর্যবসিত হয়েছিল।
19. আঠারো শতকের শেষ থেকে উনিশ শতক পর্যন্ত বাংলা যাত্রাপালার ক্রম-ইতিহাস বিবৃত করো।
Answer: রাজেন্দ্রলাল মিত্রের বয়ান থেকে জানা যায়, শিশুরাম অধিকারী এবং তাঁর দুই শিষ্য শ্রীদাম ও সুবলের চেষ্টায় যাত্রার সুদিন ফিরে আসতে থাকে। এই সময় বাংলা দেশে কৃয়যাত্রার পাশাপাশি লোকপ্রিয় হয়ে উঠতে থাকে ভারতচন্দ্রের সৃষ্টি অবলম্বনে ‘বিদ্যাসুন্দর’ যাত্রাপালা।
গোবিন্দ অধিকারীর হাতে যাত্রা আবার তার পুরোনো জৌলুশ ফিরে পেতে শুরু করে। নতুন রুচির সঙ্গে সংগতি রেখে তিনি পালা- নাটকের অঙ্কভাগ করলেন, কিন্তু দৃশ্যভাগ করলেন না। এরপর কৃষ্ণকমল গোস্বামী ভক্তিরস প্রসারের উদ্দেশ্যে কৃয়যাত্রাকে নতুন ছাদ দিলেন। পরবর্তীকালে ‘বিদ্যাসুন্দর’ যাত্রাপালাকে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে পৌঁছে দেন গোপালচন্দ্র দাস, যিনি গোপাল উড়ে নামেই সমধিক পরিচিত। এই সময়ের কয়েকজন উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব ছিলেন বকু মিঞা, সাদের মিঞা, ঝড়ুদাস অধিকারী, হরিনাথ মজুমদার প্রমুখ। পরবর্তী সময়ে মতিলাল রায় যাত্রাকে অশ্লীলতা বা নিম্নরুচির হাত থেকে উদ্ধার করে লোকশিক্ষার বাহন হিসেবে নিযুক্ত করেন।
20. নবনাট্য আন্দোলনের পরিচয় দাও।
Answer: মূলত শম্ভু মিত্রের উদ্যোগে বাংলা নাট্য-আন্দোলনে যুক্ত হয় নবনাট্য আন্দোলন। গণনাট্যের পরবর্তী পর্যায় হল নবনাট্য আন্দোলন। নবনাট্যের বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করতে হলে গঙ্গাপদ বসুর কথাতেই বলতে হয়-“সৎ মানুষের নতুন জীবনবোধের এবং নতুন সমাজ ও বলিষ্ঠ জীবনগঠনের মহৎ প্রয়াস যে সুলিখিত নাটকে শিল্প সুষমায় প্রতিফলিত, তাকেই বলতে পারি নবনাট্যের নাটক এবং এইরকম নাটক নিয়ে মঞ্চে সমাজসচেতন শিল্পীর মতো রিয়ালিটির যে অন্বেষণ তাকেই বলতে পারি নবনাট্য আন্দোলন।” বস্তুতপক্ষে, নাটক নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষার বিষয়ে গণনাট্যের সঙ্গে নবনাট্যের তেমন কোনো বৈসাদৃশ্য লক্ষ করা না গেলেও একটি বিষয়ে উভয়ের মধ্যে পার্থক্য দেখা গিয়েছিল। সেটি হল, নবনাট্যের দলগুলি বিশেষ কোনো রাজনৈতিক মতাদর্শের মধ্যে নিজেদের সীমাবদ্ধ করতে চাননি। নবনাট্যের সূত্রে বিশেষভাবে উল্লেখ্য হলেন নাট্যাচার্য শম্ভু মিত্র (চাঁদবণিকের পালা), তৃপ্তি মিত্র (বিদ্রোহিণী) উমানাথ ভট্টাচার্য (ছারপোকা) প্রমুখ।
21. গণনাট্য আন্দোলনের বৈশিষ্ট্যগুলি উল্লেখ করো।
Answer: প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরে বিশ্বজোড়া আর্থিক মন্দার ফলে চারদিকে শুরু হয় অরাজকতা। এই সুযোগে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে শুরু হয় একনায়কতন্ত্র বা স্বৈরাচারী ফ্যাসিস্ট সাম্রাজ্যবাদ। লোরকা, র্যালফ ফক্সের ন্যায় অনেক বিশ্ববন্দিত ব্যক্তি এইসব ফ্যাসিস্ট শক্তির হাতে নিহত হন। এই পরিপ্রেক্ষিতেই ভারতে গণনাট্য সংঘ বা গণনাট্য আন্দোলনের জন্ম হয়। কমিউনিস্ট পার্টির সাংস্কৃতিক মঞ্চ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত গণনাট্য সংঘ যে আদর্শগুলি মেনে চলত সেগুলি হল-
১. নাটকে থাকবে বাস্তব সমস্যার রূপায়ণ ও জনগণের সম্মিলিত প্রতিবাদ-প্রতিরোধের পথ।
২. ব্যক্তি এখানে শ্রেণির প্রতিভূ হয়ে নাটকে চিত্রিত হবেন।
৩. শিল্পের উদ্দেশ্য হবে জনগণের সমস্যার মূল কারণ খুঁজে বের করে পরিবর্তনের উপায় সম্পর্কে তাদের সচেতন করিয়ে দেওয়া।
৪. আমজনতার হৃৎস্পন্দনকে স্পর্শ করার জন্য নাটকে থাকবে লোকসংগীত বা লোক-উৎসবের ঘটনা।
22. ‘নীলদর্পণ’ নাটকের নাট্যকার কে? এটির ইংরেজি অনুবাদ কে করেছিলেন? নাটকটির প্রভাব উল্লেখ করো।
Answer: ‘নীলদর্পণ’ নাটকের নাট্যকার দীনবন্ধু মিত্র। অবশ্য এই নাটকটি ‘নীলদর্পণং নাটকং’ নামে প্রথম প্রকাশ করেন নাট্যকার ‘কেনাচিৎ পথিকেনভি প্রণাতম্’ ছদ্মনামে।
মাইকেল মধুসূদন দত্ত ‘by a Native’ ছদ্মনামে নাটকটির ইংরেজি অনুবাদ করেছিলেন।
‘নীলদর্পণ’ নাটকটির মধ্য দিয়ে ইংরেজদের শোষণের স্বরূপটি এমনভাবে উদ্ঘাটিত হয় যে, সমগ্র শিক্ষিত ভারতবাসী ক্ষুদ্ধ হয়ে ওঠেন। এই নাটকটি সমাজের সর্বস্তরের মানুষকেই আন্দোলিত করে তুলেছিল। এই নাটকের অভিনয় দিয়েই (৭/১২/১৮৭১) টিকিটের মাধ্যমে নাটক দেখার ‘সাধারণ রঙ্গালয়’-এর উদ্বোধন ঘটে। ব্রিটিশ সরকার দেশীয় নাটকের ক্ষমতা সম্বন্ধে ওয়াকিবহালও হন। ‘নীলদর্পণ’ নাটকের দ্বারা প্রভাবিত হয়েই ক্রমে ক্রমে লিখিত ও অভিনীত হতে থাকে জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘পুরুবিক্রম’, কিরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘ভারতে যতন’, হরলাল রায়ের ‘শঙ্কর সুখাবসান’ ও ‘হেমলতা’, অমৃতলাল বসুর ‘হীরকচূর্ণ’, উপেন্দ্রনাথ দাশের ‘শরৎ সরোজিনী’, ‘গজদানন্দ ও যুবরাজ’, ‘হনুমানচরিত্র’ ও ‘পুলিশ অফ পিগ অফ শিপ’-প্রভৃতি সমাজ-সচেতন রাজনৈতিক নাটক। এইসব নাটকের অভিনয় ব্রিটিশ সরকারের মাথাব্যথার কারণ হয়ে ওঠে। কারণ, এইসব নাটকে সমসাময়িক বিভিন্ন ঘটনার মধ্য দিয়ে ব্রিটিশ সরকারের অত্যাচার-অবিচারের স্বরূপ তুলে ধরা হয়েছিল যা ‘নীলদর্পণ’ নাটকের উত্তরাধিকার বহন করে। ব্রিটিশ সরকার এর ফলস্বরূপ ‘অভিনয় নিয়ন্ত্রণ আইন’ (১৬ ডিসেম্বর, ১৮৭৬) প্রণয়ন করতে বাধ্য হন।
রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর | বাংলা নাটক ও যাত্রার ধারা – একাদশ শ্রেণীর বাংলা প্রশ্ন ও উত্তর | WB Class 11 Bengali Bangla Natok o Jatrar Dhara Question and Answer :
1. বাংলা নাটকের ইতিহাসে গিরিশচন্দ্র ঘোষের অবদান আলোচনা করো। অথবা, নাট্যকার হিসেবে গিরিশচন্দ্র ঘোষের কৃতিত্ব বিচার করো।
Answer: গিরিশচন্দ্রের নাটকগুলিকে পাঁচটি শ্রেণিতে ভাগ করা যেতে পারে-
১. গীতিনাট্য: অকালবোধন, আগমনী, দোললীলা, মায়াতরু, মোহিনী প্রতিমা, আলাদিন, আবু হোসেন প্রভৃতি তাঁর উল্লেখযোগ্য গীতিনাট্য।
২. ঐতিহাসিক নাটক: গিরিশচন্দ্র রচিত ঐতিহাসিক নাটকগুলির মধ্যে অশোক, সিরাজদ্দৌলা (১৯০৬ খ্রি.), মীরকাশিম (১৯০৬ খ্রি.) এবং ছত্রপতি শিবাজী (১৯০৭ খ্রি.) বিশেষ উল্লেখযোগ্য। এই নাটকগুলিতে পরাধীন ভারতবাসীর সমকালীন রাজনৈতিক চেতনা ও স্বদেশপ্রেম প্রকাশিত হলেও অতিরিক্ত উচ্ছ্বাস এবং অতিনাটকীয়তা এগুলির ত্রুটি।
৩. পৌরাণিক ও ভক্তিমূলক নাটক: পৌরাণিক ও ভক্তিমূলক নাটক রচনার ক্ষেত্রে গিরিশচন্দ্র বিপুল সাফল্য অর্জন করেছিলেন। রাবণবধ, সীতার বনবাস, অভিমন্যু বধ, রামের বনবাস, পাণ্ডবের অজ্ঞাতবাস, ধ্রুবচরিত্র, জনা প্রভৃতি তাঁর বিখ্যাত পৌরাণিক নাটক। তিনি অবতার বা মহাপুরুষের জীবন অবলম্বনেও বেশ কয়েকটি ভক্তিমূলক নাটক রচনা করেছিলেন, যেমন-চৈতন্যলীলা, বিল্বমঙ্গল, নিমাই সন্ন্যাস, বুদ্ধদেবচরিত প্রভৃতি।
৪. সামাজিক নাটক: গিরিশচন্দ্র যে কয়েকটি পরিবার-আশ্রিত সামাজিক নাটক রচনা করেন, সেগুলির মধ্যে প্রফুল্ল, হারানিধি, বলিদান, শাস্তি কি শান্তি বিশেষ উল্লেখযোগ্য।
৫. প্রহসন: তাঁর প্রহসনগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হল ভোটমঙ্গল, হীরার ফুল, বেল্লিক বাজার, বড়দিনের বখশিস, য্যায়সা-কো-ত্যায়সা প্রভৃতি।
2. বিশ শতকের যাত্রাপালার পরিচয় দাও।
Answer: বিশ শতকের গোড়াতেই যাত্রার বিষয়ে পরিবর্তন লক্ষ করা গেল। সমকালীন রাজনৈতিক পরিবেশকে কাজে লাগিয়ে চারণকবি মুকুন্দদাস স্বদেশিয়ানায় ভরিয়ে তুললেন গ্রামের যাত্রামঞ্চকে। বিদেশি শাসক থেকে শুরু করে অত্যাচারী, ব্যভিচারী স্বদেশি জমিদার ও সুদখোর মহাজন হয়ে উঠল তাঁর গানে আক্রমণের লক্ষ্য। তাঁর প্রদর্শিত পথে যাত্রাকে এগিয়ে নিয়ে গেলেন মথুর সাহা ও ভূষণ দাস। এরপর ব্রজেন্দ্রনাথ দে ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দের দুর্ভিক্ষের পটভূমিকায় রচনা করেন আকালের দেশ নামক একটি পালা। ১৯৬১ খ্রিস্টাব্দে শোভাবাজার রাজবাড়িতে যাত্রার আসর বসলে তা শহুরে শিক্ষিতদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। বিষয়বস্তু নির্বাচনের ক্ষেত্রে যুগের চাহিদাকে প্রাধান্য দিতে শুরু করলেন যাত্রা নির্মাতারা। মঞ্চে এল হিটলার, লেনিন, সুভাষচন্দ্রের মতো ব্যক্তিত্বদের নিয়ে তৈরি যাত্রাপালা অথবা ভিয়েতনামের যুদ্ধের কথা। নকশালবাড়ি আন্দোলনের পটভূমিকায় উৎপল দত্ত ১৯৬৭ খ্রিস্টাব্দে রচনা করলেন রাইফেল। সেই সময়ের দুজন উল্লেখযোগ্য যাত্রাপালা রচয়িতা হলেন ভৈরবনাথ গঙ্গোপাধ্যায় ও শম্ভুনাথ বাগ। এইভাবেই বারেবারে যাত্রাশিল্পে এসেছে প্রয়োজনীয় নানারকম বাঁক এবং নতুনত্ব।
3. বাংলা নাটকে বাদল সরকারের অবদান আলোচনা করো।
Answer: গত শতাব্দীর পঞ্চাশের দশকের পর থেকে ইউরোপ ও আমেরিকায় স্যামুয়েল বেকেট, হ্যারল্ড প্রিন্টার, লুইজি পিরানদেল্লোর প্রবর্তনায় যে অ্যাবসার্ডিটি ও জাদুবাস্তবতা ও আধুনিক নাটকের প্রাণ হয়ে উঠেছিল, বাংলা নাটকের তার সার্থক প্রয়োগের কৃতিত্ব বাদল সরকারের। তার নাটকের আদর্শ ছিল প্রসেনিয়াম মঞ্চ ও বাণিজ্যিকতার বাইরে তৃতীয় ধারার নাট্যচর্চা। এই উদ্দেশ্যেই ১৯৬৮ খ্রিস্টাব্দে তিনি ‘শতাব্দী’ নাট্যদল প্রতিষ্ঠা করেন। পথনাটক বা অঙ্গন মঞ্চে নাটকের চর্চা ছিল তাঁর উদ্দেশ্য। স্ক্রিপ্ট-এর দাসত্ব না করা, মুখের ভাষার পাশাপাশি শরীরী ভাষার প্রয়োগ ইত্যাদি ছিল বাদল সরকারের নাটকের বৈশিষ্ট্য। বাদল সরকারের উল্লেখযোগ্য নাটকগুলির মধ্যে আছে ‘এবং ইন্দ্রজিৎ’, ‘বাকী ইতিহাস’, ‘পাগলা ঘোড়া’ ‘ত্রিংশ শতাব্দী’, ‘মিছিল’, ‘ভোমা’, ‘সুখ পাঠ্য ভারতের ইতিহাস’ ইত্যাদি। অ্যাবসারড্ নাটক নাট্যকাহিনিতে আদি, মধ্য এবং অন্ত্যের সুসামঞ্জস্যতাকে পরিত্যাগ করে এবং তার এলোমেলো চলন, ইঙ্গিতধর্মী সংলাপ তথা এই ধরনকে ব্যবহার করে সমকালের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ ও যুগযন্ত্রণাকে নাটকের বিষয় করে তুলেছিলেন বাদল সরকার।
একাদশ শ্রেণীর সাজেশন – Class 11 Suggestion
আরোও দেখুন:-
Class 11 Bengali Suggestion Click Here
আরোও দেখুন:-
Class 11 English Suggestion Click Here
আরোও দেখুন:-
Class 11 Geography Suggestion Click Here
আরোও দেখুন:-
Class 11 History Suggestion Click Here
আরোও দেখুন:-
Class 11 All Subjects Suggestion Click Here
FILE INFO : WB Class 11 Bengali Bangla Natok o Jatrar Dhara Question and Answer PDF Download for FREE | একাদশ শ্রেণীর বাংলা সাজেশন বিনামূল্যে ডাউনলোড করুণ | বাংলা নাটক ও যাত্রার ধারা – MCQ প্রশ্নোত্তর, অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর, সংক্ষিপ্ত প্রশ্নউত্তর, ব্যাখ্যাধর্মী প্রশ্নউত্তর
PDF Name : বাংলা নাটক ও যাত্রার ধারা – একাদশ শ্রেণীর বাংলা প্রশ্ন ও উত্তর | WB Class 11 Bengali Bangla Natok o Jatrar Dhara Question and Answer PDF
Price : FREE
Download Link : Click Here To Download
পশ্চিমবঙ্গ একাদশ শ্রেণির বাংলা পরীক্ষার সম্ভাব্য প্রশ্ন উত্তর ও শেষ মুহূর্তের সাজেশন ডাউনলোড। একাদশ শ্রেণীর বাংলা পরীক্ষার জন্য সমস্ত রকম গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। West Bengal Class 11 Bengali Suggestion Download. WBCHSE Class 11 Bengali short question suggestion. WB Class 11 Bengali Bangla Natok o Jatrar Dhara Question and Answer PDF download. WB Class 11th Bengali suggestion and important questions. WB Class 11 Bengali Bangla Natok o Jatrar Dhara Question and Answer PDF.
Get the WB Class 11 Bengali Bangla Natok o Jatrar Dhara Question and Answer PDF by winexam.in
West Bengal WB Class 11 Bengali Bangla Natok o Jatrar Dhara Question and Answer PDF prepared by expert subject teachers. WB Class 11th Bengali Suggestion with 100% Common in the Examination.
Class 11th Bengali Bangla Natok o Jatrar Dhara Suggestion
West Bengal Class 11th Bengali Bangla Natok o Jatrar Dhara Suggestion Download. WBCHSE HS Bengali short question suggestion. WB Class 11 Bengali Bangla Natok o Jatrar Dhara Question and Answer PDF download. HS Question Paper Political science.
একাদশ শ্রেণীর বাংলা সাজেশন – বাংলা নাটক ও যাত্রার ধারা – প্রশ্ন উত্তর | WB Class 11th Bengali Suggestion
একাদশ শ্রেণীর বাংলা বাংলা নাটক ও যাত্রার ধারা – প্রশ্ন উত্তর। একাদশ শ্রেণীর বাংলা সাজেশন – বাংলা নাটক ও যাত্রার ধারা – প্রশ্ন উত্তর | WB Class 11th Bengali Bangla Natok o Jatrar Dhara Question and Answer Suggestion.
বাংলা নাটক ও যাত্রার ধারা – একাদশ শ্রেণির বাংলা সাজেশন | West Bengal Class Eleven Bengali Bangla Natok o Jatrar Dhara Suggestion
একাদশ শ্রেণীর বাংলা পশ্চিমবঙ্গ একাদশ শ্রেণির বোর্ডের (WBCHSE) সিলেবাস বা পাঠ্যসূচি অনুযায়ী একাদশ শ্রেণির বাংলা বিষয়টির সমস্ত প্রশ্নোত্তর। সামনেই একাদশ শ্রেণির পরীক্ষা, তার আগে winexam.in আপনার সুবিধার্থে নিয়ে এল বাংলা নাটক ও যাত্রার ধারা – একাদশ শ্রেণির বাংলা সাজেশন | West Bengal Class Eleven Bengali Suggestion । বাংলা বিষয়ে ভালো রেজাল্ট করতে হলে অবশ্যই পড়ুন আমাদের একাদশ শ্রেণীর বাংলা সাজেশন বই ।
বাংলা নাটক ও যাত্রার ধারা – একাদশ শ্রেণির বাংলা সাজেশন | West Bengal Class 11th Suggestion
আমরা WBCHSE একাদশ শ্রেণির পরীক্ষার বাংলা বিষয়ের – বাংলা নাটক ও যাত্রার ধারা – একাদশ শ্রেণির বাংলা সাজেশন | West Bengal Class 11th Suggestion আলোচনা করেছি। আপনারা যারা এবছর একাদশ শ্রেণির বাংলা পরীক্ষা দিচ্ছেন, তাদের জন্য আমরা কিছু প্রশ্ন সাজেশন আকারে দিয়েছি. এই প্রশ্নগুলি পশ্চিমবঙ্গ একাদশ শ্রেণির বাংলা পরীক্ষা তে আসার সম্ভাবনা খুব বেশি. তাই আমরা আশা করছি একাদশ শ্রেণির বাংলা পরীক্ষার সাজেশন কমন এই প্রশ্ন গুলো সমাধান করলে আপনাদের মার্কস বেশি আসার চান্স থাকবে।
একাদশ শ্রেণীর বাংলা সাজেশন – বাংলা নাটক ও যাত্রার ধারা | WB Class 11 Bengali Bangla Natok o Jatrar Dhara Question and Answer with FREE PDF Download
Bengali Class XI, Bengali Class Eleven, WBCHSE, syllabus, একাদশ শ্রেণি বাংলা, ক্লাস ইলেভেন বাংলা, একাদশ শ্রেণিরের বাংলা, বাংলা একাদশ শ্রেণির – বাংলা নাটক ও যাত্রার ধারা, একাদশ শ্রেণী – বাংলা নাটক ও যাত্রার ধারা, একাদশ শ্রেণির বাংলা বাংলা নাটক ও যাত্রার ধারা, ক্লাস টেন বাংলা নাটক ও যাত্রার ধারা, HS Bengali – বাংলা নাটক ও যাত্রার ধারা, Class 11th বাংলা নাটক ও যাত্রার ধারা, Class XI বাংলা নাটক ও যাত্রার ধারা, ইংলিশ, একাদশ শ্রেণির ইংলিশ, পরীক্ষা প্রস্তুতি, রেল, গ্রুপ ডি, এস এস সি, পি, এস, সি, সি এস সি, ডব্লু বি সি এস, নেট, সেট, চাকরির পরীক্ষা প্রস্তুতি, West Bengal Secondary Board exam Bengali Bangla Natok o Jatrar Dhara suggestion, West Bengal West Bengal Class Eleven Board exam suggestion , WBCHSE , একাদশ শ্রেণির সাজেশান, একাদশ শ্রেণির সাজেশান , একাদশ শ্রেণির সাজেশান , একাদশ শ্রেণির সাজেশন, একাদশ শ্রেণীর বাংলা সাজেশান , একাদশ শ্রেণীর বাংলা সাজেশান , একাদশ শ্রেণীর বাংলা , একাদশ শ্রেণীর বাংলা, মধ্যশিক্ষা পর্ষদ, HS Suggestion Bengali , একাদশ শ্রেণীর বাংলা – বাংলা নাটক ও যাত্রার ধারা – সাজেশন | WB Class 11 Bengali Bangla Natok o Jatrar Dhara Question and Answer PDF PDF, একাদশ শ্রেণীর বাংলা – বাংলা নাটক ও যাত্রার ধারা – সাজেশন | WB Class 11 Bengali Bangla Natok o Jatrar Dhara Question and Answer PDF PDF, একাদশ শ্রেণীর বাংলা – বাংলা নাটক ও যাত্রার ধারা – সাজেশন | একাদশ শ্রেণীর বাংলা – বাংলা নাটক ও যাত্রার ধারা – সাজেশন | WB Class 11 Bengali Bangla Natok o Jatrar Dhara Question and Answer PDF PDF, একাদশ শ্রেণীর বাংলা – বাংলা নাটক ও যাত্রার ধারা – সাজেশন | WB Class 11 Bengali Bangla Natok o Jatrar Dhara Question and Answer PDF PDF,একাদশ শ্রেণীর বাংলা – বাংলা নাটক ও যাত্রার ধারা – সাজেশন | WB Class 11 Bengali Bangla Natok o Jatrar Dhara Question and Answer PDF PDF, একাদশ শ্রেণীর বাংলা – বাংলা নাটক ও যাত্রার ধারা – সাজেশন | WB Class 11 Bengali Bangla Natok o Jatrar Dhara Question and Answer PDF, HS Bengali Suggestion PDF , West Bengal Class 11 Bengali Bangla Natok o Jatrar Dhara Question and Answer PDF.
বাংলা নাটক ও যাত্রার ধারা – একাদশ শ্রেণীর বাংলা প্রশ্ন ও উত্তর | WB Class 11 Bengali Bangla Natok o Jatrar Dhara Question and Answer PDF
এই (বাংলা নাটক ও যাত্রার ধারা – একাদশ শ্রেণীর বাংলা প্রশ্ন ও উত্তর | WB Class 11 Bengali Bangla Natok o Jatrar Dhara Question and Answer PDF) পোস্টটি থেকে যদি আপনার লাভ হয় তাহলে আমাদের পরিশ্রম সফল হবে। আরোও বিভিন্ন স্কুল বোর্ড পরীক্ষা, প্রতিযোগিতা মূলক পরীক্ষার সাজেশন, অতিসংক্ষিপ্ত, সংক্ষিপ্ত ও রোচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর (All Exam Guide Suggestion, MCQ Type, Short, Descriptive Question and answer), প্রতিদিন নতুন নতুন চাকরির খবর (Job News) জানতে এবং সমস্ত পরীক্ষার এডমিট কার্ড ডাউনলোড (All Exam Admit Card Download) করতে winexam.in ওয়েবসাইট ফলো করুন, ধন্যবাদ।