
কাব্য-কবিতার ধারা – একাদশ শ্রেণীর বাংলা প্রশ্ন ও উত্তর
WB Class 11 Bengali Kabbo Kobitar Dhara Question and Answer PDF
কাব্য-কবিতার ধারা – একাদশ শ্রেণীর বাংলা প্রশ্ন ও উত্তর | WB Class 11 Bengali Kabbo Kobitar Dhara Question and Answer PDF : কাব্য-কবিতার ধারা – একাদশ শ্রেণীর বাংলা সাজেশন ও অধ্যায় ভিত্তিতে প্রশ্নোত্তর নিচে দেওয়া হল। এবার পশ্চিমবঙ্গ একাদশ শ্রেণির বাংলা পরীক্ষায় (WB Class 11 Bengali Kabbo Kobitar Dhara Question and Answer PDF | West Bengal Class 11 Bengali Kabbo Kobitar Dhara Question and Answer PDF | WBCHSE Board Class 11th Bengali Question and Answer with PDF file Download) এই প্রশ্নউত্তর ও সাজেশন খুব ইম্পর্টেন্ট। আপনারা যারা আগামী একাদশ শ্রেণীর বাংলা পরীক্ষার জন্য বা একাদশ শ্রেণির বাংলা | WB Class 11 Bengali Kabbo Kobitar Dhara Question and Answer PDF | WBCHSE Board WB Class 11th Bengali Suggestion Question and Answer খুঁজে চলেছেন, তারা নিচে দেওয়া প্রশ্ন ও উত্তর ভালো করে পড়তে পারেন।
কাব্য-কবিতার ধারা – একাদশ শ্রেণীর বাংলা প্রশ্ন ও উত্তর | পশ্চিমবঙ্গ একাদশ শ্রেণির বাংলা সাজেশন/নোট (West Bengal Class 11th Bengali / WBCHSE Class 11 Bengali Kabbo Kobitar Dhara Question and Answer PDF)
পশ্চিমবঙ্গ একাদশ শ্রেণীর বাংলা সাজেশন (West Bengal Class 11th Bengali Suggestion PDF / Notes / Class 11 Bengali Kabbo Kobitar Dhara Question and Answer) কাব্য-কবিতার ধারা প্রশ্ন উত্তর MCQ প্রশ্নোত্তর, অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর (SAQ), সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর (Short Question and Answer), ব্যাখ্যাধর্মী বা রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর (descriptive question and answer) এবং PDF ফাইল ডাউনলোড লিঙ্ক নিচে দেওয়া রয়েছে।
কাব্য-কবিতার ধারা
সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর | কাব্য-কবিতার ধারা – একাদশ শ্রেণীর বাংলা প্রশ্ন ও উত্তর | WB Class 11 Bengali Kabbo Kobitar Dhara SAQ Question and Answer :
- সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের দুটি কাব্যগ্রন্থের নাম উল্লেখ করো এবং তাঁর কবিচেতনার মূল বৈশিষ্ট্য কী?
Answer: সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের দুটি উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ হল-‘হোমশিখা’ এবং ‘কুহু ও কেকা’।
কবিতার আস্বাদে এক স্নিগ্ধ মধুরতা, শব্দবিন্যাসে ধ্বনিময়তা এবং ছন্দের নিপুণ প্রয়োগ সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের কবিতার মূল বৈশিষ্ট্য।
- বাংলা কবিতায় কাকে ‘দুঃখবাদী কবি’ বলা হয় এবং কেন?
Answer: বাংলা কবিতায় কবি যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তকে ‘দুঃখবাদী কবি’ বলা হয়।
চারপাশের জীবন এবং জগতকে তার প্রত্যাশিত স্বরূপে না পাওয়ার কারণে যতীন্দ্রনাথের কাব্যে তীব্র ক্ষোভ এবং হতাশার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। সেকারণেই যতীন্দ্রনাথকে ‘দুঃখবাদী’ কবি বলা হয়।
- বাংলা কবিতায় ‘মরুকবি’ নামে কে বিখ্যাত এবং কেন?
Answer: বাংলা কবিতায় ‘মরুকবি’ হিসেবে খ্যাত যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত।
যতীন্দ্রনাথের প্রথমদিকের তিনটি কাব্যগ্রন্থের নাম ছিল ‘মরীচিকা’, ‘মরুশিখা’ এবং ‘মরুমায়া’। সেকারণেই কবির প্রসিদ্ধি ‘মরুকবি’ হিসেবে।
- প্রকাশকাল সহ জীবনানন্দ দাশের প্রথম এবং শেষ কাব্যগ্রন্থের নাম লেখো।
Answer: জীবনানন্দ দাশের প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘ঝরা পালক’ (১৯২৭ খ্রিস্টাব্দ)।
জীবনানন্দ দাশের শেষ কাব্যগ্রন্থ ‘বেলা অবেলা কালবেলা’ (১৯৬১ খ্রিস্টাব্দ)।
- সুধীন্দ্রনাথ দত্তের কবিচেতনার মূল বিশেষত্ব কী ছিল?
Answer: সুধীন্দ্রনাথ দত্তের কবিতা মানব ইতিহাসের নিস্ফলতা, বন্ধ্যাত্বকে ফুটিয়ে তুলেছে। তাই ‘অর্কেস্ট্রা’, ‘ক্রন্দসী’ থেকে ‘উত্তরফাল্গুনী’ সুধীন্দ্রনাথের কাব্যে সর্বত্রই যেন নেতির সাধনা।
- অমিয় চক্রবর্তীর কবিভাবনার মূল বৈশিষ্ট্য কী ছিল?
Answer: অমিয় চক্রবর্তী তাঁর সমকালের কবিদের মধ্যে একমাত্র রবীন্দ্রানুসারী কবি, তাই সমগ্রতার সন্ধান তাঁর অন্বিষ্ট। ‘খসড়া’, ‘একমুঠো’ থেকে ‘অভিজ্ঞান বসন্ত’ প্রতিটি কাব্যগ্রন্থেই তাই লক্ষ করা যায় এক প্রশান্তি এবং ধ্যানময়তা।
- বিষ্ণু দে-র দুটি কাব্যগ্রন্থের নাম লেখো এবং তাঁর কবিম্বভাবের মূল বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করো।
Answer: বিষ্ণু দে-র দুটি উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ ‘চোরাবালি’ এবং ‘পূর্বলেখ’।
দেশের জনসমাজ, দেশজ সংস্কৃতি এবং প্রকৃতির সমন্বয়ের ভাবনা বিষ্ণু দে উচ্চারণ করেছেন তাঁর কবিতায়।
- বুদ্ধদেব বসুর শেষ পর্যায়ের দুটি কাব্যগ্রন্থের নাম লেখো এবং এই পর্বে কবিচেতনার বৈশিষ্ট্য সংক্ষেপে লেখো।
Answer: বুদ্ধদেব বসুর শেষ পর্বের দুটি কাব্যগ্রন্থ হল ‘যে আঁধার আলোর অধিক’ এবং ‘শীতের প্রার্থনা: বসন্তের উত্তর’।
শেষপর্বের কাব্যগ্রন্থগুলোতে বুদ্ধদেব বসুর কবিতায় এক তীব্র অন্তর্দ্বন্দ্ব দেখা যায়। দেহ ও আত্মার দ্বন্দ্ব, আদর্শ এবং বাস্তবের দ্বন্দ্ব, প্রবৃত্তির সঙ্গে প্রেমের দ্বন্দ্ব তীব্র রোমান্টিকতার মধ্যেও প্রবল হয়ে ওঠে।
- কবিগানের উদ্ভবের ঐতিহাসিক কারণ কী ছিল?
Answer: আঠারো শতকের মধ্যভাগ থেকে উনিশ শতকের শেষভাগ পর্যন্ত ইংরেজশাসিত কলকাতায় যে হঠাৎ-বড়োলোক শ্রেণির উদ্ভব হয় তাদের বিকৃত রুচির চাহিদা মেটানোর জন্যই কবিগানের উদ্ভব হয়েছিল।
- কবিগানের গায়ন-পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করো।
Answer: কবিগানের লড়াই হত দুটি দলের মধ্যে। দুই দলের দুজন প্রধান গায়ক কোনো একটি বিষয় নিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে গান রচনা করতে এবং চাপানউতোরের মাধ্যমে একে অন্যকে পর্যুদস্ত করার চেষ্টা করত।
- কবিগানের বিষয় বিন্যাস কী রকম ছিল আলোচনা করো।
Answer: কবিগানের আসরে ভবানী বিষয়ক, সখী-সংবাদ এবং বিরহ অংশের পর সর্বশেষে লহর বা খেউড় গাওয়া হত। এই খেউড় অংশটি অশ্লীল ভাষাপূর্ণ হওয়ায় এখানেই দর্শকরা আমোদ অনুভব করত।
- কবিগানের আদিস্রষ্টা কে? অন্য দুজন বিখ্যাত কবিয়ালের নাম লেখো।
Answer: কবিগানের আদিস্রষ্টা ছিলেন গোঁজলা গুঁই। দুজন বিখ্যাত কবিয়াল হলেন হরু ঠাকুর ও ভোলা ময়রা।
- আখড়াই গানের প্রবর্তনায় কে পৃষ্ঠপোষকতা করেন? এর বৈশিষ্ট্য কী ছিল?
Answer: আখড়াই গানের প্রবর্তন করেন কুলুই চন্দ্র সেন, মহারাজ নবকৃয় মিত্রের পৃষ্ঠপোষকতায়।
আখড়াই গানে কোনো চাপানউতোর থাকত না এবং আখড়াই গান ছিল শাস্ত্রীয় সংগীত ঘেঁষা।
- টপ্পা শব্দের অর্থ কী? টপ্পা কী ধরনের গান?
Answer: ‘টপ্পা’ শব্দের অর্থ ‘লাফ’। অন্য অর্থে তা বোঝায় সংক্ষেপ।
ধ্রুপদ খেয়ালের সংক্ষিপ্ততর এবং লঘু সুরের গান হল টপ্পা।
- টপ্পা গানের শ্রেষ্ঠ শিল্পী কে? টপ্পা গানের অন্য দুজন জনপ্রিয় শিল্পীর নাম লেখো।
Answer: টপ্পা গানের শ্রেষ্ঠ শিল্পী হলেন রামনিধি গুপ্ত বা নিধু বাবু।
টপ্পা গানের অন্য দুজন বিখ্যাত শিল্পী হলেন শ্রীধর কথক এবং কালী মির্জা।
- ঢপকীর্তনের জন্ম হয়েছে কীভাবে? এই ধারার গানের প্রবর্তক কে?
Answer: পাঁচালি এবং কীর্তন গানের সংমিশ্রণে ঢপকীর্তনের জন্ম।
ঢপকীর্তনের প্রবর্তক ছিলেন মধুসূদন কিন্নর বা মধু কান।
- বাংলা কবিতায় বিহারীলালের অনুসারী দুজন কবির নাম লেখো এবং তাঁদের একটি করে কাব্যগ্রন্থের নাম লেখো।
Answer: বাংলা কবিতায় বিহারীলালের অনুসারী দুজন কবি হলেন সুরেন্দ্রনাথ মজুমদার এবং দেবেন্দ্রনাথ সেন।
সুরেন্দ্রনাথ মজুমদারের বিখ্যাত গীতিকাব্য ‘মহিলা’ আর দেবেন্দ্রনাথ মজুমদারের বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ ‘অপূর্ব বীরাঙ্গনা’।
- কাকে ‘স্বভাব কবি’ বলা হয় এবং তাঁর রচিত দুটি কাব্যগ্রন্থের নাম লেখো।
Answer: গোবিন্দ চন্দ্র দাসকে ‘স্বভাব কবি’ বলা হয়।
তাঁর রচিত দুটি উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ ‘কুঙ্কুম’ এবং ‘কস্তুরী’।
- অক্ষয় কুমার বড়ালের লেখা বিখ্যাত শোককাব্যের নাম কী? এটি কোন্ ঘটনাকে উপলক্ষ্য করে লেখা?
Answer: অক্ষয় কুমার বড়ালের লেখা বিখ্যাত শোককাব্যটি হল ‘এষা’।
স্ত্রীর মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে তিনি এই কাব্যগ্রন্থটি লেখেন।
- উনিশ শতকের শেষ এবং বিংশ শতাব্দীর সূচনাকালের দুজন মহিলা কবির নাম লেখো ও তাঁদের রচিত দুটি কাব্যগ্রন্থের নাম উল্লেখ করো।
Answer: উনিশ শতকের শেষ এবং বিংশ শতাব্দীর সূচনাকালের দুজন মহিলা কবি হলেন গিরীন্দ্রমোহিনী দাসী এবং কামিনী রায়।
গিরীন্দ্রমোহিনী দাসীর একটি উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ হল ‘অশ্রুকণা’। কামিনী রায়ের একটি উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ হল ‘মাল্য ও নির্মাল্য’।
- রবীন্দ্রনাথের কবিপ্রতিভার নিজস্বতা প্রথম কোন্ কাব্যগ্রন্থে প্রকাশ পেয়েছে এবং কীভাবে?
Answer: রবীন্দ্রনাথের কবিপ্রতিভার নিজস্বতা প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল ‘প্রভাতসংগীত’ (১২৯০ বঙ্গাব্দ) কাব্যগ্রন্থে।
প্রকৃতি এবং মানবজীবনের সঙ্গে একাত্মতায় রবীন্দ্রনাথের কবিসত্তা নিজস্ব ভাব, ভাষা এবং ছন্দ খুঁজে পেয়েছিল এই কাব্যগ্রন্থে।
- রবীন্দ্রনাথের সৌন্দর্যতত্ত্ব ও জীবনদেবতা ভাবনার প্রকাশ ঘটেছে যে দুটি কাব্যগ্রন্থে তাদের নাম ও প্রকাশকাল উল্লেখ করো।
Answer: রবীন্দ্রনাথের সৌন্দর্যতত্ত্ব ও জীবনদেবতা ভাবনার প্রকাশ ঘটেছে কবির ‘সোনার তরী’ (১৩০০ বঙ্গাব্দ) ও ‘চিত্রা’ (১৩০২ বঙ্গাব্দ) কাব্যগ্রন্থে।
- রবীন্দ্রনাথের ‘বলাকা’ কাব্যগ্রন্থ কত সালে প্রকাশিত হয়? এটি কী জন্য বিখ্যাত?
Answer: রবীন্দ্রনাথের ‘বলাকা’ কাব্যগ্রন্থটি ১৯১৬ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হয়।
‘বলাকা’ কাব্যগ্রন্থটি দুটি কারণে বিখ্যাত-একটি কবির যুদ্ধবিরোধী মনোভাব, অন্যটি গতিবাদের প্রকাশ।
- রবীন্দ্রনাথের শেষপর্বের দুটি কাব্যগ্রন্থের নাম লেখো এবং এইপর্বে কবির বিশিষ্টতা কী?
Answer: রবীন্দ্রনাথের শেষপর্বের দুটি কাব্যগ্রন্থের নাম-‘পুনশ্চ’ এবং ‘পত্রপুট’।
এই পর্বে রবীন্দ্রনাথের কবিতা ক্রমশ মাটি এবং মানুষের কাছে চলে এসেছে; রবীন্দ্রকবিতায় গদ্যছন্দের প্রয়োগ এই পর্বেই দেখা যায়।
- বাংলা কবিতায় রবীন্দ্র-অনুসারী দুজন কবির নাম উল্লেখ করো।
Answer: রবীন্দ্রনাথের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে যাঁরা কবিতা রচনা করেছিলেন তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য দুজন কবি হলেন করুণানিধান বন্দ্যোপাধ্যায় এবং যতীন্দ্রমোহন বাগচী।
বিশ্লেষণধর্মী প্রশ্নোত্তর | কাব্য-কবিতার ধারা – একাদশ শ্রেণীর বাংলা প্রশ্ন ও উত্তর | WB Class 11 Bengali Kabbo Kobitar Dhara Question and Answer :
1. রবীন্দ্রনাথের গদ্যকবিতাপর্বের রবীন্দ্রকাব্য সম্পর্কে আলোচনা করো।
Answer: গদ্যকবিতাপর্ব: রবীন্দ্রকাব্যের একটি বিশেষ স্থান অধিকার করে আছে তাঁর গদ্যকবিতাপর্ব। ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত পুনশ্চ কাব্যটি তাঁর প্রথম গদ্যকাব্য। পুনশ্চ ছাড়া তিনি আরও তিনটি গদ্যকাব্য লেখেন। সেগুলি হল শেষ সপ্তক (১৯৩৫ খ্রি.), পত্রপুট (১৯৩৬ খ্রি.) এবং শ্যামলী (১৯৩৬ খ্রি.)। পুনশ্চ থেকে শ্যামলীর মধ্যবর্তী সময়ে যদিও তিনি দুটি ছন্দবদ্ধ কাব্য রচনা করেছিলেন, তবুও এই পর্বটিকে মূলত পুনশ্চপর্ব বা গদ্যকবিতার পর্ব (১৯২৯-১৯৩৬ খ্রি.) বলেই চিহ্নিত করা হয়।
2. রবীন্দ্রনাথের শেষপর্বের কাব্যধারার প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি সূত্রাকারে লেখো।
Answer: শেষপর্বের কাব্যধারার বৈশিষ্ট্য: খাপছাড়া (১৯৩৭ খ্রি.) থেকে শেষ লেখা (মৃত্যুর পর প্রকাশিত) পর্যন্ত পর্বটিকে বলা যেতে পারে রবীন্দ্রকাব্যের শেষপর্ব বা অন্তিমপর্ব (১৯৩৬-১৯৪১ খ্রি.)। এ পর্বে তিনি খাপছাড়া, ছড়া ও ছবি, প্রহাসিনী ইত্যাদি মজার কয়েকটি কাব্যগ্রন্থ লিখলেও শ্যামলী, পত্রপুট, সেঁজুতি, আকাশ প্রদীপ, নবজাতক, সানাই, রোগশয্যায়, জন্মদিনে প্রভৃতি গ্রন্থ হল এই পর্বের উল্লেখযোগ্য রচনা।
১. এই পর্বে রবীন্দ্রনাথ আর গদ্যকবিতা রচনা করেননি।
২. এই অন্তিম পর্বে তিনি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ব্যবহার করেছেন মুক্তক ছন্দ।
৩. জীবনসায়াহ্নে পৌঁছে জীবন, মৃত্যু ও বিশ্বজগৎ সম্পর্কে কবির গভীর উপলব্ধির প্রকাশ লক্ষ করা যায় এই পর্বের বিভিন্ন কবিতায়।
৪. এই পর্বের কাব্যের ভাষা প্রায় নিরাভরণ। সত্যদ্রষ্টা কবি জীবনের শেষপ্রান্তে দাঁড়িয়ে মৃত্যুর স্বরূপ সম্বন্ধে তাঁর দৃঢ় প্রত্যয় ও সংশয়হীন উপলব্ধি এখানে প্রকাশ করেছেন।
3. কবি যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের কাব্যরচনার বৈশিষ্ট্য কী, সে সম্পর্কে আলোচনা করো।
অথবা, রবীন্দ্রোত্তর কবি হিসেবে কবি যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো।
অথবা, বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে কবি যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের স্থান সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো।
Answer: রবীন্দ্রকাব্যের প্রভাবের মধ্যে যে-কয়েকজন কবি নিজস্বতা বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছিলেন, তাঁদের অন্যতম যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত (১৮৮৭-১৯৫৪ খ্রি.)। যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থগুলি হল-মরীচিকা (১৯২৩ খ্রি.), মরুশিখা (১৯২৭ খ্রি.), মরুমায়া (১৯৩০ খ্রি.), সায়ম্ (১৯৪০ খ্রি.), ত্রিযামা (১৯৪৮ খ্রি.) এবং নিশান্তিকা (১৯৫৭ খ্রি.)। অনুপূর্বা নামে কবির একটি নির্বাচিত কবিতার সংকলনগ্রন্থও প্রকাশিত হয় ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে।
কাব্যরচনার বৈশিষ্ট্য:
১. যতীন্দ্রনাথের কবিতার মূল ভিত্তি ছিল মানবতাবাদ।
২. জীবনকে যেভাবে দেখতে চেয়েছিলেন যতীন্দ্রনাথ, তা না পেয়েই প্রবল দুঃখবোধে একইসঙ্গে কাতর ও বিদ্রোহী হয়েছে কবিমন।
৩. প্রকৃতির সৌন্দর্য বা রোমান্টিকতার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছে যতীন্দ্রনাথের কবিমন- “প্রেম বলে কিছু নাই চেতনা আমার জড়ে মিশাইলে সব সমাধান পাই।”
৪. কবি যতীন্দ্রনাথ তাঁর প্রথমপর্বের কবিতায় ঈশ্বরের অস্তিত্ব এবং তাঁর ক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
4. বাংলা কবিতার ইতিহাসে মোহিতলাল মজুমদারের স্থান নির্দেশ করো।
অথবা, মোহিতলাল মজুমদারের কবিতা সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করে বাংলা সাহিত্যে তাঁর স্থান নির্দেশ করো।
অথবা, কবি মোহিতলালের কবিকৃতির পরিচয় দাও।
Answer: রবীন্দ্রনাথের প্রতিভার দীপ্তিতে যে-কয়েকজন কবি নিজস্বতা বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছিলেন, মোহিতলাল মজুমদার (১৮৮৮-১৯৫২ খ্রি.) তাঁদের মধ্যে অন্যতম।
মোহিতলাল মোট ছয়খানি কাব্যগ্রন্থ রচনা করেন: দেবেন্দ্রমঙ্গল (১৯২২ খ্রি.), স্বপনপসারী (১৯২২ খ্রি.), বিস্মরণী (১৯২৭ খ্রি.), স্মরগরল (১৯৩৬ খ্রি.), হেমন্ত-গোধূলি (১৯৪১ খ্রি.) এবং ছন্দ চতুর্দশী (১৯৪১ খ্রি.)।
কাব্যরচনার বৈশিষ্ট্য:
১. আঙ্গিক-সচেতন শিল্পীমন: ভাবের বিন্যাস, শব্দ নির্বাচনে এবং ছন্দের প্রয়োগে মোহিতলালের সচেতন শিল্পীমনের পরিচয় পাওয়া যায়।
২. ইন্দ্রিয়পরায়ণ রোমান্টিকতা: মোহিতলালের কাব্যদর্শনের মূলে আছে দেহবাদ এবং ইন্দ্রিয়পরায়ণতা-“আমি মদনের রচিনু দেউল-দেহের দেউল পরে/পঞ্চশরের প্রিয় পাঁচ-ফুল সাজাইনু থরে থরে।”
৩. যুক্তিবিন্যাস: মোহিতলালের কবিতার অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হল ভাবালুতা বর্জন ও যুক্তিপারম্পর্যের শৃঙ্খলে কবিতাকে কাঠিন্য দান।
5. বাংলা কবিতার ধারায় কবিগানের ভূমিকা বিষয়ে আলোচনা করো।
Answer: অষ্টাদশ ঊনবিংশ শতাব্দীতে কলকাতা শহরে যে নব্যধনী সম্প্রদায়ের সৃষ্টি হয়েছিল, তাদের বিকৃত রুচির খোরাক ও বিনোদনের অংশ হিসেবে কবিগানের জন্ম। কবিগানে তাৎক্ষণিক উত্তেজনার মধ্যে আমোদ খোঁজা হয়। কবিগান আসলে গানের লড়াই। লড়াই হয় দুটি দলের মধ্যে। দুটি দলেই থাকে একজন করে প্রধান গায়েন বা গায়ক। চাপান উতোরের মাধ্যমে গান পরিবেশন করা হয়। ঢোল, করতাল, কাঁসি ইত্যাদির সাহায্যে সংগত করা হয়। কবিগানের শেষ পর্যায়ে থাকে খেউড়। এই অংশে পরস্পরের উদ্দেশ্যে তীব্র গালিগালাজের কারণে শ্রোতারা তীব্র আমোদ অনুভব করে। আদি কবিয়াল গোজলা গুঁই। বিখ্যাত কবিয়ালদের মধ্যে রঘুনাথ দাস, হরু ঠাকুর, ভোলা ময়রা, রাম বসু, অ্যান্টনি ফিরিঙ্গি প্রমুখের নাম উল্লেখযোগ্য।
6. বাংলা কবিতায় ঈশ্বর গুপ্তের অবদান আলোচনা করো।
Answer: বাংলা কবিতার মধ্যযুগ আর আধুনিক যুগের মধ্যে বাফার স্টোন-এর মতো দাঁড়িয়ে আছেন ঈশ্বর গুপ্ত। তাঁর কবিতায় সমকালীন জীবনের ছবি ধরা পড়েছে। ঈশ্বর গুপ্তের কবিতা ধর্মের প্রভাব মুক্ত। প্রতিদিনের জীবন তার চূর্ণ চেহারায় ধরা পড়েছে কবির কবিতায়। ষড়ঋতুর সৌন্দর্য থেকে আনারস, ইংরেজি নববর্ষ, নারকেল, পিঠেপুলি, তপসে মাছ ইত্যাদি তাঁর কবিতার বিষয় হয়েছে। বিদেশি রাজশক্তি এবং নিজেদের ইংরেজ ভাবা বাঙালিদের তিনি বিদ্রুপ করেছেন। স্বদেশ এবং মাতৃভাষার প্রতি কবির দরদ প্রকাশিত হয়েছে তাঁর লেখার মধ্য দিয়ে। আবার স্ত্রীশিক্ষার মতো বিষয়ের বিরোধিতাও করতে দেখা গিয়েছে ঈশ্বর গুপ্তকে। প্রাচীনপন্থার প্রতি আনুগত্যকে সম্পূর্ণ অস্বীকার করতে পারেননি ঈশ্বর গুপ্ত। আর ঠিক এই কারণেই ‘যুগসন্ধির কবি’ বলা হয় তাঁকে। সংবাদ প্রভাকরের সম্পাদক হওয়ার কারণে তাঁর কবিতায় শব্দ ব্যবহার এবং ভঙ্গিতে সাংবাদিক সুলভ মনোভাবের প্রকাশ ঘটেছে।
7. বাংলা আখ্যানকাব্য ও মহাকাব্যসাহিত্যে মধুসূদন দত্তের অবদান সংক্ষেপে আলোচনা করো।
Answer: বাংলা কাব্যসাহিত্যে, বিশেষত আখ্যানকাব্য ও মহাকাব্যে, মধুসূদন দত্তের আবির্ভাব এক বিস্ময়কর ঘটনা।
তিলোত্তমাসম্ভব: মধুসূদন বাংলা পয়ারের কাঠামোর মধ্যে অন্ত্যমিল তুলে দিয়ে অমিত্রাক্ষর ছন্দ বা অমিল প্রবহমান পয়ারে রচনা করেন চারটি সর্গে বিভক্ত একটি সম্পূর্ণ আখ্যানকাব্য- তিলোত্তমাসম্ভব কাব্য (১৮৬০ খ্রিস্টাব্দ)। সুন্দ-উপসুন্দ বধের জন্য তিলোত্তমা নামের অপ্সরা সৃষ্টির পৌরাণিক কাহিনিকে মধুসূদন দত্ত নিজের মনের মতো করে সাজিয়ে পরিবেশন করেন এই কাব্যে।
মেঘনাদবধ কাব্য: মধুসূদন দত্তের শ্রেষ্ঠ কীর্তি নয়টি সর্গে বিন্যস্ত মেঘনাদবধ কাব্য (১৮৬১ খ্রিস্টাব্দ)। অমিত্রাক্ষর ছন্দ মেঘনাদবধ কাব্য-এ আরও পরিণত হয়ে উঠেছে। মেঘনাদবধ কাব্য বাংলা ভাষায় রচিত প্রথম শিল্পসার্থক সাহিত্যিক মহাকাব্য (Literary Epic)। এই কাব্যে মধুসূদন রামায়ণ-এর কাহিনি ও চরিত্রগুলিকে নিজস্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী পরিবর্তন করতে দ্বিধা করেননি। তাঁর এই কাব্যে রাম বা লক্ষ্মণ নন, রাবণ এবং মেঘনাদই নায়ক-সহনায়কে পরিণত হয়েছেন। কাব্যটির প্রশংসা করতে গিয়ে বঙ্কিমচন্দ্র বলেছেন, “…the most valuable work in modern Bengali literature” |
8. মহিকেল মধুসূদন দত্তের লেখা কাব্যগুলির নাম লেখো। তাঁর লেখা শ্রেষ্ঠ কাব্যটির বিষয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করো।
Answer: মাইকেল মধুসূদন দত্তের লেখা বাংলা কাব্যগুলি হল তিলোত্তমাসম্ভব কাব্য (১৮৬০ খ্রি.), ব্রজাঙ্গনা কাব্য (১৮৬১ খ্রি.), মেঘনাদবধ কাব্য (১৮৬১ খ্রি.), বীরাঙ্গনা কাব্য (১৮৬২ খ্রি.) এবং চতুর্দশপদী কবিতাবলী (১৮৬৬ খ্রি.)। এগুলির মধ্যে শ্রেষ্ঠতম কাব্যগ্রন্থটির নাম মেঘনাদবধ কাব্য।
মেঘনাদবধ কাব্য: নয়টি সর্গে বিন্যস্ত মধুসূদনের মেঘনাদবধ কাব্য বাংলা সাহিত্যের একমাত্র শিল্পসার্থক সাহিত্যিক মহাকাব্য। অমিত্রাক্ষর ছন্দ এই কাব্যে সর্বোৎকৃষ্ট রূপ লাভ করেছে। প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য মহাকাব্যের যুগপৎ আদর্শে রচিত এই মহাকাব্য রামায়ণ-এর মাত্র তিন দিন ও দুরাত্রের ঘটনাকে অবলম্বন করে রচিত হয়েছে। কিন্তু এই কাব্যে রাম-লক্ষ্মণ-বিভীষণ নন, রাবণ-মেঘনাদই নায়ক- সহনায়কে পরিণত হয়েছেন। রাজমহিষী চিত্রাঙ্গদার মধ্যে নারীমুক্তির জাগরণ লক্ষ করা যায়। কবির এই দৃষ্টিভঙ্গি নবজাগরণেরই ফলশ্রুতি। কাব্যটির প্রশংসা করতে গিয়ে বঙ্কিমচন্দ্র বলেছেন, “… the most valuable work in modern Bengali Literature.”
9. আখ্যানকাব্যের সাধারণ পরিচয় দিয়ে উনিশ শতকের আখ্যানকাব্যগুলি উল্লেখ করো।
Answer: উনিশ শতকের আখ্যানকাব্যগুলির বিশিষ্টতা: বাংলা সাহিত্যের মধ্যযুগে যেসব আখ্যানকাব্যের পরিচয় আমরা পাই, তা ছিল দেবদেবীর মাহাত্ম্যজ্ঞাপক অথবা দৈবনিরপেক্ষ নরনারীর প্রেমের উপাখ্যান। কিন্তু উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে পাশ্চাত্য আদর্শে যেসব আখ্যানকাব্য রচিত হয়েছিল, সেগুলি ছিল ইতিহাস আশ্রিত এবং স্বদেশপ্রেম ও জাতীয়তাবোধে পরিপূর্ণ। এই আখ্যানকাব্যগুলির উৎস কিংবদন্তি বা ইতিহাস হলেও এগুলিতে কবিকল্পনা স্থান পাওয়ায় কখনো-কখনো তা সমসাময়িক হয়ে উঠেছে।
10. মহাকাব্য ও তার বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করো। উনিশ শতকের মহাকাব্যগুলি উল্লেখ করো।
Answer: মহাকাব্য: মহাকাব্য বলতে আমরা বুঝি সেইসব আখ্যানকাব্যকে, যার মধ্যে বিশাল কালের প্রেক্ষাপটে জাতীয় জীবনের উত্থানপতনের কাহিনি বর্ণিত হয়। মহাকাব্য দু-প্রকার: (১) আর্য মহাকাব্য বা ধ্রুপদি মহাকাব্য, যেমন-রামায়ণ, মহাভারত। (২) সাহিত্যিক মহাকাব্য, যেমন-মাইকেল মধুসূদন দত্তের মেঘনাদবধ কাব্য।
বৈশিষ্ট্য: আলংকারিকরা মহাকাব্যের কতকগুলি বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করেছেন। এগুলি হল-(১) মহাকাব্যে কবির ব্যক্তিগত আবেগ- অনুভূতির প্রকাশ না ঘটে তাতে ঘটনা ও চরিত্রের বস্তুনিষ্ঠ বর্ণনা প্রকাশিত হয়। (২) পৌরাণিক বা ঐতিহাসিক ঘটনাকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে মহাকাব্য। (৩) মহাকাব্যের নায়ক হন সুখে-দুঃখে অচঞ্চল, দৃঢ়চেতা এবং ব্যক্তিত্বসম্পন্ন পুরুষ। (৪) আটটির বেশি সর্গে বিভক্ত মহাকাব্যের কাহিনি স্বর্গ-মর্ত্য-পাতাল জুড়ে রচিত হয়। (৫) গাম্ভীর্যপূর্ণ কাব্যভাষায় রচিত মহাকাব্যে বীররস ও করুণরসের প্রাধান্য থাকে।
উনিশ শতকের মহাকাব্য: উনিশ শতকে যেসব আখ্যানকাব্য সাহিত্যিক মহাকাব্যের রূপ পেয়েছে, সেগুলি হল হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের বৃত্রসংহার (দুই খণ্ড ১৮৭৫ খ্রি. ও ১৮৭৭ খ্রি.), নবীনচন্দ্র সেনের ত্রয়ীকাব্য-রৈবতক (১৮৮৭ খ্রি.), কুরুক্ষেত্র (১৮৯৩ খ্রি.) ও প্রভাস (১৮৯৬ খ্রি.) এবং মাইকেল মধুসূদন দত্তের মেঘনাদবধ কাব্য (১৮৬১ খ্রি.)।
11. বাংলা গীতিকবিতার ধারায় বিহারীলাল চক্রবর্তীর অবদান আলোচনা করো।
Answer: আধুনিক বাংলা কাব্যের প্রথম গীতিকবি হলেন ‘ভোরের পাখি’ বিহারীলাল চক্রবর্তী (১৮৩৫-১৮৯৪ খ্রি.)।
বিহারীলালের কাব্যগ্রন্থসমূহ: বিহারীলাল রচিত উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থগুলি হল সঙ্গীত শতক (১৮৬২ খ্রি.), বঙ্গসুন্দরী (১৮৭০ খ্রি.), নিসর্গসন্দর্শন (১৮৭০ খ্রি.), বন্ধুবিয়োগ (১৮৭০ খ্রি.), প্রেমপ্রবাহিনী (১৮৭১ খ্রি.), সারদামঙ্গল, (১৮৭৯ খ্রি.) এবং সাধের আসন (১৮৮৯ খ্রি.)।
কবিধর্ম: বিহারীলাল নিসর্গসন্দর্শন কাব্যের কবিতাগুলিতে নিসর্গ প্রকৃতিতে ব্যক্তিসত্তা আরোপ করেছেন। জননী-জায়া-কন্যা-ভগিনী প্রভৃতি বিবিধ মূর্তিধারিণী নারীর স্নেহ-মায়া-মমতাময় রূপ ও সৌন্দর্যের সন্ধান করেছেন কবি বঙ্গসুন্দরী কাব্যে। কবি নিজের এবং বন্ধুবর্গের জীবনের বাস্তব অভিজ্ঞতার পাশাপাশি নিজের প্রেমানুভূতিকে কাব্যের আকারে রূপদান করেছেন তাঁর বন্ধুবিয়োগ ও প্রেমপ্রবাহিনী কাব্যদুটিতে। তবে বিহারীলালের শ্রেষ্ঠ কাব্য সারদামঙ্গল, যেখানে কবির সৌন্দর্যচেতনা, গীতিবৈশিষ্ট্য পূর্ণতা লাভ করেছে। সাধের আসন কাব্যটিতে কবি সৌন্দর্যতত্ত্বের তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা করেছেন।
12. উনিশ শতকের শেষ এবং বিংশ শতকের সূচনায় যে মহিলা-কবিরা বাংলা সাহিত্যে এসেছিলেন তাঁদের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।
Answer: উনিশ শতকের শেষ এবং বিংশ শতকের সূচনায় যে মহিলা-কবিদের বাংলা সাহিত্যে আগমন ঘটেছিল তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য গিরীন্দ্রমোহিনী দাসী, কামিনী রায়, মানকুমারী বসু, স্বর্ণকুমারী দেবী, নগেন্দ্রবালা মুস্তাফী সরস্বতী, প্রমীলা নাগ, ষোড়শীবালা দাসী, জ্ঞানেন্দ্রমোহিনী দত্ত প্রমুখ।
‘কবিতাহার’, ‘ভারতকুসুম’, ‘অশ্রুকণা’, ‘আভাস’, ‘শিখা’, ‘অর্ঘ্য’ ইত্যাদি গিরীন্দ্রমোহিনী দাসীর উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ যেগুলিতে প্রকৃতির বর্ণনা এবং করুণ রসের অসামান্য প্রকাশ দেখা যায়। কামিনী রায়ের কাব্যগ্রন্থের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘আলো ও ছায়া’, ‘মাল্য ও নির্মাল্য’, ‘অশোক সংগীত’ ইত্যাদি। শোকমূলক কবিতায় তাঁর প্রতিভা অত্যন্ত উজ্জ্বল। রবীন্দ্রনাথের বড়দি স্বর্ণকুমারী দেবী নারীজীবনের অভিজ্ঞতা এবং প্রেম ও উচ্ছ্বাসকে কবিতার বিষয় করে তুলেছেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থগুলি হল ‘গাঁথা’, ‘কবিতা ও গান’। মানকুমারী বসু মূলত ‘বামাবোধিনী’ পত্রিকায় লিখতেন। তাঁর লেখা উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলি হল ‘প্রিয় প্রসঙ্গ’, ‘কাব্যকুসুমাঞ্জলি’, ‘কনকাঞ্জলি’, ‘বনবাসিনী’ ইত্যাদি।
13. রবীন্দ্রনাথের কাব্যগ্রন্থগুলি কাল অনুসারে বিভাগ করো। প্রতি বিভাগের একটি করে কাব্যগ্রন্থের নাম লেখো।
Answer: বিপুল বৈচিত্র্যময় রবীন্দ্রকাব্যকে প্রবণতা অনুযায়ী নিম্নলিখিত আটটি ভাগে ভাগ করা যায়- (১) সূচনাপর্ব (১৮৭৫-১৮৮১ খ্রি.), (২) উন্মেষপর্ব (১৮৮২-১৮৮৬ খ্রি.), (৩) ঐশ্বর্যপর্ব (১৮৮৬- ১৮৯৬ খ্রি.), (৪) অন্তর্বর্তীপর্ব (১৮৯৬-১৯১০ খ্রি.), (৫) গীতাঞ্জলিপর্ব বা অধ্যাত্মপর্ব (১৯১০-১৯১৫ খ্রি.), (৬) বলাকাপর্ব (১৯১৬-১৯২৯ খ্রি.), (৭) পুনশ্চপর্ব বা গদ্যকবিতাপর্ব (১৯২৯-১৯৩৬ খ্রি.), (৮) শেষপর্ব বা অন্তিমপর্ব (১৯৩৬-১৯৪১ খ্রি.)।
(১) সূচনাপর্ব (১৮৭৫-৮১ খ্রি.): ভগ্নহৃদয়, (২) উন্মেষপর্ব (১৮৮২- ৮৬ খ্রি.): সন্ধ্যাসংগীত, (৩) ঐশ্বর্যপর্ব (১৮৮৬-৯৬ খ্রি.): মানসী, (৪) অন্তর্বর্তীপর্ব (১৮৯৬-১৯১০ খ্রি.): ক্ষণিকা, (৫) গীতাঞ্জলিপর্ব বা অধ্যাত্মপর্ব (১৯১০-১৫ খ্রি.): গীতাঞ্জলি, (৬) বলাকাপর্ব (১৯১৬-২৯ খ্রি.): বলাকা, (৭) পুনশ্চপর্ব বা গদ্যকবিতাপর্ব (১৯২৯-৩৬ খ্রি.): পুনশ্চ, (৮) শেষপর্ব বা অন্তিমপর্ব (১৯৩৬-৪১ খ্রি.): প্রান্তিক
14. সূচনাপর্বের রবীন্দ্রকাব্যগুলি সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করো।
Answer: সূচনাপর্বের রবীন্দ্রকাব্য: রবীন্দ্রনাথের যখন সাত-আট বছর বয়স তখন থেকে তাঁর কবিতা লেখার সূত্রপাত।
প্রথম জীবনে রবীন্দ্রনাথ খণ্ড কবিতা এবং গাথাকাব্য দুই-ই রচনা করেছেন। ‘হিন্দুমেলার উপহার’, ‘অভিলাষ’ প্রভৃতি রচনার পাশাপাশি তিনি ‘বনফুল’ এবং ‘কবিকাহিনী’ নামে দুটি গাথাকাব্য রচনা করেছেন। বনফুল প্রথমে পত্রিকায় প্রকাশিত (১৮৭৫ খ্রি.) হয় এবং গ্রন্থাকারে প্রথম প্রকাশিত হয় কবিকাহিনী (১৮৭৮ খ্রি.)। এই পর্বের অন্যান্য উল্লেখযোগ্য কাব্য হল ভানুসিংহ ঠাকুরের পদাবলী, ভগ্নহৃদয় ও শৈশবসংগীত (১৮৮১ খ্রি.)।
কবিধর্ম: সূচনাপর্বের আখ্যানকাব্যগুলি ব্যর্থ প্রেমের আখ্যান, যে প্রেমের নায়ক একজন কবি। এই পর্বের গীতিকবিতাগুলিও রোমান্টিক, গীতিধর্মী এবং উচ্ছ্বাসপূর্ণ। এইসব রচনায় বিহারীলাল চক্রবর্তী, অক্ষয়চন্দ্র চৌধুরী প্রমুখের প্রভাব লক্ষ করা যায়। পরিণত জীবনে রবীন্দ্রনাথ এগুলিকে বলেছেন ‘কপিবুকের কবিতা’।
15. উন্মেষপর্বের রবীন্দ্রকাব্যগুলির পরিচয় দিয়ে এই পর্বের এরূপ নামকরণের যথার্থতা বিচার করো।
Answer: উন্মেষপর্বের রবীন্দ্রকাব্য: সন্ধ্যাসংগীত (১৮৮২ খ্রি.), প্রভাতসংগীত (১৮৮৩ খ্রি.), ছবি ও গান (১৮৮৪ খ্রি.), কড়ি ও কোমল (১৮৮৮ খ্রি.)-এগুলিই হল উন্মেষপর্বের রবীন্দ্রকাব্য।
কবিধর্ম: অনুকরণ-অনুসরণের যুগ পেরিয়ে এসে কবি হিসেবে রবীন্দ্রনাথের নিজস্বতার প্রথম পরিচয় পাওয়া যায় সন্ধ্যাসংগীত কাব্যে। তবে এই কাব্যের কোনো কোনো কবিতায় কবির অকারণ দুঃখবিলাসের পরিচয় খুঁজে পাওয়া যায়, যেমন-“আয় দুঃখ, আয় তুই/তোর তরে পেতেছি আসন”। এরপর প্রভাতসংগীত কাব্যের ‘নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গ’ কবিতায় কবি তাঁর আনন্দময় চেতনাকে এক অপূর্ব আবেগময় ভঙ্গিতে প্রকাশ করলেন। এখান থেকেই প্রকৃতপক্ষে বিশ্বজগতের সঙ্গে মিলন-উৎসুক, আনন্দবাদী রবীন্দ্রনাথের যাত্রা শুরু। এ ছাড়াও এই পর্বে প্রকাশিত হয় ছবি ও গান এবং কড়ি ও কোমল কাব্য। কড়ি ও কোমল কাব্যে প্রকাশ পেয়েছে নিবিড় ইন্দ্রিয়চেতনা, জীবনের প্রতি গভীর আসক্তি এবং বিষয়ের বৈচিত্র্য।
16. ‘ঐশ্বর্যপর্ব’-এর কাব্য আক্ষরিক অর্থেই ঐশ্বর্যময়- আলোচনা করো।
Answer: রবীন্দ্রনাথের ঐশ্বর্যপর্বের রচনা হল-মানসী, সোনার তরী, চিত্রা, চৈতালি।
মানসী: মানসী থেকেই রবীন্দ্রনাথের কবিপ্রতিভার ঐশ্বর্যময় প্রকাশ ঘটে। মানসী কাব্যগ্রন্থের ভূমিকাতে রবীন্দ্রনাথ নিজেই জানাচ্ছেন, “মানসীতেই ছন্দের নানা খেয়াল দেখা দিতে আরম্ভ করেছে। কবির সঙ্গে যেন একজন শিল্পী এসে যোগ দিল।”
সোনার তরী, চিত্রা, চৈতালি : মানসী-তে কবি ও শিল্পীর মিলন নানান ঐশ্বর্যে পূর্ণ হয়ে দেখা দিল সোনার তরী, চিত্রা ও চৈতালি তে। সোনার তরী কাব্যগ্রন্থের ‘যেতে নাহি দিব’ কবিতায় কন্যাবিচ্ছেদে আকুল পিতা কোনো-এক জায়গায় বিচ্ছেদ ভারাক্রান্ত নিসর্গ প্রকৃতির সঙ্গে একাকার হয়ে যায়। এই কাব্যের ‘মানসসুন্দরী’ ও ‘নিরুদ্দেশ যাত্রা’ কবিতার রহস্যময়ী নায়িকা চিত্রা কাব্যে পরিণত হয়েছে জীবনদেবতায়। চিত্রা কাব্যের জীবনদেবতা বিষয়ক কবিতার পাশাপাশি ‘এবার ফিরাও মোরে’, ‘উর্বশী’, ‘স্বর্গ হইতে বিদায়’ প্রভৃতি কবিতা বাংলা সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ সম্পদ। চৈতালি হল মূলত অনেকগুলি সনেটজাতীয় কবিতার সংকলনগ্রন্থ। এখানে কবির জীবন-দর্শনের সঙ্গে প্রকাশ পেয়েছে তাঁর সুগভীর মর্ত্যপ্রেম। কবির রোমান্টিক কল্পনা ও বিশিষ্ট জীবন-দর্শন এবং কাব্যসৃষ্টির মৌলিকতার বিচারে এই পর্বের কাব্যগুলি সত্যিই ঐশ্বর্যময়।
17. রবীন্দ্রকাব্যের গীতাঞ্জলিপর্ব সম্পর্কে আলোচনা করো।
Answer: গীতাঞ্জলিপর্ব: গীতাঞ্জলি (১৯১০ খ্রি.), গীতিমাল্য (১৯১৪ খ্রি.) এবং গীতালি (১৯১৫ খ্রি.)- এই তিনটি কাব্য রবীন্দ্রকাব্যের গীতাঞ্জলিপর্বের (১৯১০-১৯১৫ খ্রি.) অন্তর্গত।
কবিধর্ম: রবীন্দ্রনাথের গীতাঞ্জলি, গীতিমাল্য ও গীতালি কাব্যগ্রন্থে আছে পরম শক্তিমানের কাছে আত্মনিবেদনের আকুতি। গীতাঞ্জলি তে কবির সঙ্গে দেবতার যেমন একটি শ্রদ্ধাপূর্ণ দূরত্ব আছে, গীতিমাল্য-তে সেই দূরত্ব প্রায় বিলীন হয়ে গেছে। গীতাঞ্জলির নির্বাচিত কবিতাগুলির সঙ্গে আরও কিছু নির্বাচিত কবিতা যোগ করে রবীন্দ্রনাথ সেগুলির ইংরেজি অনুবাদ করেন। অনূদিত কবিতাগুলি প্রকাশিত হয় ‘Song Offerings’ নামে। এই অনূদিত গীতাঞ্জলি-র জন্য রবীন্দ্রনাথ ১৯১৩ খ্রিস্টাব্দে ‘নোবেল’ পুরস্কারে সম্মানিত হন। অধ্যাত্মরসের কবিতা তথা গান হলেও এই পর্বের রচনায় পার্থিব আসক্তির উত্তাপও সঞ্চারিত হয়েছে।
18. বলাকাপর্বে রবীন্দ্রকাব্যের পরিচয় দাও।
Answer: বলাকাপর্ব: বলাকা (১৯১৬ খ্রি.), পলাতকা (১৯১৮ খ্রি.), পূরবী (১৯২৫ খ্রি.), মহুয়া (১৯২৯ খ্রি.), বনবাণী ও পরিশেষ (১৯২৯ খ্রি.) বলাকাপর্ব (১৯১৬-১৯২৯ খ্রি.)-এর উল্লেখযোগ্য রবীন্দ্রকাব্য।
কবিধর্ম: ১৯১৬ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত বলাকা কাব্যে রবীন্দ্রকবিতা একটা নতুন বাঁক নেয়; সেজন্য এই পর্বকে বলাকাপর্ব বলা হয়। বলাকা কাব্যে মুক্তছন্দে রবীন্দ্রনাথ গতিতত্ত্ব ও যৌবনতত্ত্বের অপরূপ প্রকাশ ঘটিয়েছেন। পলাতকা কাব্যে কবি যেমন ধরণির রূপকে ফুটিয়ে তুলেছেন, পূরবী কাব্যে তেমন আমরা লক্ষ করি কবির লীলাসঙ্গিনীর প্রসঙ্গ। মহুয়া কাব্যে বৃদ্ধ কবি প্রেমকে প্রাত্যহিক তুচ্ছতা এবং বিলাসিতা থেকে উদ্ধার করে তাকে বৃহৎ ও মহৎ কর্তব্য-কর্মের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছেন।
রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর | কাব্য-কবিতার ধারা – একাদশ শ্রেণীর বাংলা প্রশ্ন ও উত্তর | WB Class 11 Bengali Kabbo Kobitar Dhara Question and Answer :
1. সংক্ষেপে কাজী নজরুল ইসলামের কবিপ্রতিভার পরিচয় দাও।
অথবা, রবীন্দ্রযুগে আবির্ভূত হয়েও নজরুল ইসলাম কীভাবে কাব্যরচনায় স্বাতন্ত্র্য বজায় রেখেছিলেন, সে বিষয়ে সংক্ষেপে আলোচনা করো।
অথবা, কাজী নজরুল ইসলামের কাব্যচর্চার সংক্ষিপ্ত পরিচয় দিয়ে বাংলা কাব্যে তাঁর স্থান নির্দেশ করো।
অথবা, কাজী নজরুল ইসলামের কাব্যরচনার বিষয়বস্তু ও বিশিষ্টতা সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো।
Answer: বাংলা কবিতার জগতে দুরন্ত ঝড়ের মতো আবির্ভূত হয়েছিলেন কাজী নজরুল ইসলাম (১৮৯৮-১৯৭৬ খ্রি.)। তাঁর লেখা উল্লেখযোগ্য কয়েকটি কাব্যগ্রন্থ হল-অগ্নিবীণা, বিষের বাঁশী, ভাঙার গান, সাম্যবাদী, সর্বহারা, ফণিমনসা, সিন্ধুহিন্দোল, জিঞ্জির প্রভৃতি। কবিতার সঙ্গে সঙ্গে নজরুল ইসলাম গানও লিখেছেন প্রচুর। বিষয়বস্তু অনুসারে নজরুলের কবিতাগুলিকে কয়েকটি শ্রেণিতে ভাগ করা যেতে পারে-
১. প্রতিবাদী কবিতা: পরাধীনতার যন্ত্রণা থেকে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে তো বটেই, যে-কোনো অন্যায় বা অত্যাচারের বিরুদ্ধেই সরব ছিলেন নজরুল। তাঁর এরকম একটি কবিতা হল ‘বিদ্রোহী’।
২. প্রেম ও সৌন্দর্য বিষয়ক কবিতা: নজরুলের অনেক কবিতারই বিষয় হয়েছে প্রেম, সৌন্দর্যপিপাসা কিংবা ভক্তির আবেগ। ‘দোলনচাঁপা’ এই শ্রেণির প্রতিনিধিস্থানীয় কবিতা।
৩. শিশুদের উপযোগী কবিতা: কাজী নজরুল ইসলাম শিশুমনের উপযোগী বেশ কয়েকটি কল্পনানির্ভর কবিতা লিখেছিলেন, যেগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল-‘লিচু-চোর’, ‘সাত ভাই চম্পা’, ‘খুকী ও কাঠবেড়ালী’, ‘প্রভাতী’ ইত্যাদি।
৪. যৌবন বন্দনা: বিদ্রোহের কবি হওয়ায় যৌবন বন্দনা প্রত্যাশিতভাবেই নজরুলের কবিতার একটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। দেশের যুবক সম্প্রদায়কে স্বাধীনতা ও বিপ্লবের মন্ত্রে উজ্জীবিত করে তুলতে তিনি অনেক উদ্দীপনামূলক কবিতা লিখেছিলেন।
তাঁর কবিতার অন্যতম বিশেষত্ব হল তৎসম ও তদ্ভব শব্দের পাশাপাশি প্রচুর পরিমাণে আরবি-ফারসি শব্দের প্রয়োগ। শব্দ ব্যবহারের এই রীতি তাঁর কবিতায় নিয়ে এসেছে এক অভিনব গতিময় ঝংকার।
2. বাংলা কাব্যে জীবনানন্দের অবদান সম্পর্কে লেখো।
Answer: কাব্যগ্রন্থ: জীবনানন্দ দাশের দুটি উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ হল বনলতা সেন (১৯৪২ খ্রি.) এবং রূপসী বাংলা (১৯৫৭ খ্রি.)। ছাড়াও কবি ঝরা পালক (১৯২৭ খ্রি.), ধূসর পাণ্ডুলিপি (১৯৩৬ খ্রি.), মহাপৃথিবী (১৯৪৬ খ্রি.), সাতটি তারার তিমির (১৯৪৮ খ্রি.), বেলা অবেলা কালবেলা (১৯৬১ খ্রি.) প্রভৃতি কাব্যগ্রন্থের প্রণেতা।
কবিস্বভাব: রবীন্দ্রোত্তর পর্বের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য কবি জীবনানন্দ দাশ (১৮৯৯ খ্রি.-১৯৫৪ খ্রি.)। একদিকে বাংলার প্রকৃতি অন্যদিকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমকালের অবক্ষয়, যন্ত্রণা, মানুষের বিচ্ছিন্নতা অনবদ্য ভঙ্গিতে মূর্ত হয়ে উঠেছে তাঁর কবিতায়। রবীন্দ্রনাথ জীবনানন্দের কবিতাকে ‘চিত্ররূপময়’ বলে আখ্যা দিয়েছিলেন। তবে জীবনানন্দের কবিতার মূল বিষয় আধুনিক ব্যক্তিমানুষের বিচ্ছিন্নতা ও নিঃসঙ্গতার যন্ত্রণা।
3. রবীন্দ্রোত্তর কবি হিসেবে সুধীন্দ্রনাথ দত্তের কাব্যচর্চার পরিচয় দাও।
Answer: সুধীন্দ্রনাথ দত্ত ছিলেন এক স্বকীয় বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন কবি। সুধীন্দ্রনাথের প্রথম কাব্যগ্রন্থের নাম তন্বী (১৯৩০ খ্রি.)। তাঁর উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থগুলি হল- অর্কেস্ট্রা (১৯৩৫ খ্রি.), ক্রন্দসী (১৯৩৭ খ্রি.), উত্তরফাল্গুনী (১৯৪০ খ্রি.), সংবর্ত (১৯৫৩ খ্রি.), প্রতিধ্বনি (১৯৫৪ খ্রি.) এবং দশমী (১৯৫৬ খ্রি.)।
কবিধর্ম:
১. নৈরাশ্যচেতনা: ‘উত্তরফাল্গুনী’-তে কবির নৈরাশ্যচেতনা বেশ প্রকটরূপে প্রকাশ পেয়েছে। সুধীন্দ্রনাথের ‘সংবর্ত’-এর কবিতায় শোনা যায় যুগযন্ত্রণায় রক্তাক্ত কবির আর্তকণ্ঠ-“আর্তনাদ ছাড়া আজ নৈবেদ্যের যোগ্য কিছু নেই।”
২. নাগরিক জীবনযন্ত্রণার রূপায়ণ: পৌরাণিক কাহিনির নবরূপায়ণে এবং আধুনিক নাগরিক জীবনের যন্ত্রণার চিত্র অঙ্কনে পারদর্শী কবি সুধীন্দ্রনাথ।
৩. শিল্পনৈপুণ্য: তাঁর বাক্যবিন্যাস, শব্দপ্রয়োগ, ছন্দের ব্যবহার- সবকিছুর মধ্যেই আছে সচেতন শিল্পপ্রয়াস এবং নৈপুণ্য।
4. রবীন্দ্রোত্তর কবি হিসেবে সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের কাব্যচর্চার পরিচয় দাও।
Answer: সুভাষ মুখোপাধ্যায় (১৯১৯-২০০৩ খ্রি.) প্রথম জীবনে সমাজ পরিবর্তনের স্বপ্ন এবং সারাজীবন এক উদার মানবতাবাদকে তাঁর কবিতায় প্রতিষ্ঠা করেছেন।
কাব্যগ্রন্থ: সুভাষ মুখোপাধ্যায় রচিত প্রথম কাব্যগ্রন্থ পদাতিক (১৯৪০ খ্রি.)। তাঁর অন্যান্য উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থগুলি হল- অগ্নিকোণ (১৯৪৮ খ্রি.), চিরকুট (১৯৫০ খ্রি.), ফুল ফুটুক (১৯৫৭ খ্রি.), একটু পা চালিয়ে ভাই, যতদূরেই যাই (১৯৬২ খ্রি.), কাল মধুমাস (১৯৬৬ খ্রি.), ছেলে গেছে বনে (১৯৭২ খ্রি.), যা রে কাগজের নৌকা (১৯৮৯ খ্রি.)।
কবিধর্ম: সাম্রাজ্যবাদী শোষণের সামনে বিপ্লবের স্বপ্নে আন্দোলিত কবি ‘হাতে হ্রস্ব জীবনের জরিপের ফিতে’ নিয়ে বলেছেন শৃঙ্খল ভাঙতে। শিল্পিত স্বভাবে কবি ধীরে ধীরে আদর্শের যান্ত্রিকতা অপেক্ষা অনেক বেশি মানবতার সন্ধানী হয়েছেন।
একাদশ শ্রেণীর সাজেশন – Class 11 Suggestion
আরোও দেখুন:-
Class 11 Bengali Suggestion Click Here
আরোও দেখুন:-
Class 11 English Suggestion Click Here
আরোও দেখুন:-
Class 11 Geography Suggestion Click Here
আরোও দেখুন:-
Class 11 History Suggestion Click Here
আরোও দেখুন:-
Class 11 All Subjects Suggestion Click Here
FILE INFO : WB Class 11 Bengali Kabbo Kobitar Dhara Question and Answer PDF Download for FREE | একাদশ শ্রেণীর বাংলা সাজেশন বিনামূল্যে ডাউনলোড করুণ | কাব্য-কবিতার ধারা – MCQ প্রশ্নোত্তর, অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর, সংক্ষিপ্ত প্রশ্নউত্তর, ব্যাখ্যাধর্মী প্রশ্নউত্তর
PDF Name : কাব্য-কবিতার ধারা – একাদশ শ্রেণীর বাংলা প্রশ্ন ও উত্তর | WB Class 11 Bengali Kabbo Kobitar Dhara Question and Answer PDF
Price : FREE
Download Link : Click Here To Download
পশ্চিমবঙ্গ একাদশ শ্রেণির বাংলা পরীক্ষার সম্ভাব্য প্রশ্ন উত্তর ও শেষ মুহূর্তের সাজেশন ডাউনলোড। একাদশ শ্রেণীর বাংলা পরীক্ষার জন্য সমস্ত রকম গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। West Bengal Class 11 Bengali Suggestion Download. WBCHSE Class 11 Bengali short question suggestion. WB Class 11 Bengali Kabbo Kobitar Dhara Question and Answer PDF download. WB Class 11th Bengali suggestion and important questions. WB Class 11 Bengali Kabbo Kobitar Dhara Question and Answer PDF.
Get the WB Class 11 Bengali Kabbo Kobitar Dhara Question and Answer PDF by winexam.in
West Bengal WB Class 11 Bengali Kabbo Kobitar Dhara Question and Answer PDF prepared by expert subject teachers. WB Class 11th Bengali Suggestion with 100% Common in the Examination.
Class 11th Bengali Kabbo Kobitar Dhara Suggestion
West Bengal Class 11th Bengali Kabbo Kobitar Dhara Suggestion Download. WBCHSE HS Bengali short question suggestion. WB Class 11 Bengali Kabbo Kobitar Dhara Question and Answer PDF download. HS Question Paper Political science.
একাদশ শ্রেণীর বাংলা সাজেশন – কাব্য-কবিতার ধারা – প্রশ্ন উত্তর | WB Class 11th Bengali Suggestion
একাদশ শ্রেণীর বাংলা কাব্য-কবিতার ধারা – প্রশ্ন উত্তর। একাদশ শ্রেণীর বাংলা সাজেশন – কাব্য-কবিতার ধারা – প্রশ্ন উত্তর | WB Class 11th Bengali Kabbo Kobitar Dhara Question and Answer Suggestion.
কাব্য-কবিতার ধারা – একাদশ শ্রেণির বাংলা সাজেশন | West Bengal Class Eleven Bengali Kabbo Kobitar Dhara Suggestion
একাদশ শ্রেণীর বাংলা পশ্চিমবঙ্গ একাদশ শ্রেণির বোর্ডের (WBCHSE) সিলেবাস বা পাঠ্যসূচি অনুযায়ী একাদশ শ্রেণির বাংলা বিষয়টির সমস্ত প্রশ্নোত্তর। সামনেই একাদশ শ্রেণির পরীক্ষা, তার আগে winexam.in আপনার সুবিধার্থে নিয়ে এল কাব্য-কবিতার ধারা – একাদশ শ্রেণির বাংলা সাজেশন | West Bengal Class Eleven Bengali Suggestion । বাংলা বিষয়ে ভালো রেজাল্ট করতে হলে অবশ্যই পড়ুন আমাদের একাদশ শ্রেণীর বাংলা সাজেশন বই ।
কাব্য-কবিতার ধারা – একাদশ শ্রেণির বাংলা সাজেশন | West Bengal Class 11th Suggestion
আমরা WBCHSE একাদশ শ্রেণির পরীক্ষার বাংলা বিষয়ের – কাব্য-কবিতার ধারা – একাদশ শ্রেণির বাংলা সাজেশন | West Bengal Class 11th Suggestion আলোচনা করেছি। আপনারা যারা এবছর একাদশ শ্রেণির বাংলা পরীক্ষা দিচ্ছেন, তাদের জন্য আমরা কিছু প্রশ্ন সাজেশন আকারে দিয়েছি. এই প্রশ্নগুলি পশ্চিমবঙ্গ একাদশ শ্রেণির বাংলা পরীক্ষা তে আসার সম্ভাবনা খুব বেশি. তাই আমরা আশা করছি একাদশ শ্রেণির বাংলা পরীক্ষার সাজেশন কমন এই প্রশ্ন গুলো সমাধান করলে আপনাদের মার্কস বেশি আসার চান্স থাকবে।
একাদশ শ্রেণীর বাংলা সাজেশন – কাব্য-কবিতার ধারা | WB Class 11 Bengali Kabbo Kobitar Dhara Question and Answer with FREE PDF Download
Bengali Class XI, Bengali Class Eleven, WBCHSE, syllabus, একাদশ শ্রেণি বাংলা, ক্লাস ইলেভেন বাংলা, একাদশ শ্রেণিরের বাংলা, বাংলা একাদশ শ্রেণির – কাব্য-কবিতার ধারা, একাদশ শ্রেণী – কাব্য-কবিতার ধারা, একাদশ শ্রেণির বাংলা কাব্য-কবিতার ধারা, ক্লাস টেন কাব্য-কবিতার ধারা, HS Bengali – কাব্য-কবিতার ধারা, Class 11th কাব্য-কবিতার ধারা, Class XI কাব্য-কবিতার ধারা, ইংলিশ, একাদশ শ্রেণির ইংলিশ, পরীক্ষা প্রস্তুতি, রেল, গ্রুপ ডি, এস এস সি, পি, এস, সি, সি এস সি, ডব্লু বি সি এস, নেট, সেট, চাকরির পরীক্ষা প্রস্তুতি, West Bengal Secondary Board exam Bengali Kabbo Kobitar Dhara suggestion, West Bengal West Bengal Class Eleven Board exam suggestion , WBCHSE , একাদশ শ্রেণির সাজেশান, একাদশ শ্রেণির সাজেশান , একাদশ শ্রেণির সাজেশান , একাদশ শ্রেণির সাজেশন, একাদশ শ্রেণীর বাংলা সাজেশান , একাদশ শ্রেণীর বাংলা সাজেশান , একাদশ শ্রেণীর বাংলা , একাদশ শ্রেণীর বাংলা, মধ্যশিক্ষা পর্ষদ, HS Suggestion Bengali , একাদশ শ্রেণীর বাংলা – কাব্য-কবিতার ধারা – সাজেশন | WB Class 11 Bengali Kabbo Kobitar Dhara Question and Answer PDF PDF, একাদশ শ্রেণীর বাংলা – কাব্য-কবিতার ধারা – সাজেশন | WB Class 11 Bengali Kabbo Kobitar Dhara Question and Answer PDF PDF, একাদশ শ্রেণীর বাংলা – কাব্য-কবিতার ধারা – সাজেশন | একাদশ শ্রেণীর বাংলা – কাব্য-কবিতার ধারা – সাজেশন | WB Class 11 Bengali Kabbo Kobitar Dhara Question and Answer PDF PDF, একাদশ শ্রেণীর বাংলা – কাব্য-কবিতার ধারা – সাজেশন | WB Class 11 Bengali Kabbo Kobitar Dhara Question and Answer PDF PDF,একাদশ শ্রেণীর বাংলা – কাব্য-কবিতার ধারা – সাজেশন | WB Class 11 Bengali Kabbo Kobitar Dhara Question and Answer PDF PDF, একাদশ শ্রেণীর বাংলা – কাব্য-কবিতার ধারা – সাজেশন | WB Class 11 Bengali Kabbo Kobitar Dhara Question and Answer PDF, HS Bengali Suggestion PDF , West Bengal Class 11 Bengali Kabbo Kobitar Dhara Question and Answer PDF.
কাব্য-কবিতার ধারা – একাদশ শ্রেণীর বাংলা প্রশ্ন ও উত্তর | WB Class 11 Bengali Kabbo Kobitar Dhara Question and Answer PDF
এই (কাব্য-কবিতার ধারা – একাদশ শ্রেণীর বাংলা প্রশ্ন ও উত্তর | WB Class 11 Bengali Kabbo Kobitar Dhara Question and Answer PDF) পোস্টটি থেকে যদি আপনার লাভ হয় তাহলে আমাদের পরিশ্রম সফল হবে। আরোও বিভিন্ন স্কুল বোর্ড পরীক্ষা, প্রতিযোগিতা মূলক পরীক্ষার সাজেশন, অতিসংক্ষিপ্ত, সংক্ষিপ্ত ও রোচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর (All Exam Guide Suggestion, MCQ Type, Short, Descriptive Question and answer), প্রতিদিন নতুন নতুন চাকরির খবর (Job News) জানতে এবং সমস্ত পরীক্ষার এডমিট কার্ড ডাউনলোড (All Exam Admit Card Download) করতে winexam.in ওয়েবসাইট ফলো করুন, ধন্যবাদ।