
ভারতীয় আইন – Indian Law in Bengali | WiN EXAM
ভারতের আদালত ব্যবস্থা

ভারতবর্ষের বর্তমান আদালত ব্যবস্থা
♦ ভারতবর্ষের সর্বোচ্চ আদালত হল সুপ্রীম কোর্ট, আর রাজ্যের মধ্যে সর্বোচ্চ আদালত হাই কোর্ট। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপীল করতে হলে সুপ্রীম কোর্টে করতে হয়। যে-সব ট্রাইব্যুনালগুলি* সুপ্রীম কোর্টের এক্তিয়ারে রয়েছে তাদের আপীলগুলিও সুপ্রীম কোর্টে আসে। রাজ্য ও রাষ্ট্রের মধ্যে বা দুটি রাজ্যের মধ্যে বিবাদ ঘটলে – তা সুপ্রীম কোর্টেই ফয়সলা হয়। এছাড়া নাগরিকদের মৌল-অধিকার রক্ষা করার জন্য সুপ্রীম কোর্ট নানা আদেশ জারি করতে পারে। রাষ্ট্রপতি সুপ্রীম কোর্টের প্রধান ও অন্যান্য বিচারপতিদের নিয়োগ করেন। সুপ্রীম কোর্টের বিচারপতিরা ৬৫ বছর পর্যন্ত কাজ করতে পারেন। তার আগে কোনও অপরাধের জন্য তাঁদের পদ থেকে অপসারণ করাতে হলে লোকসভা ও রাজ্যসভা – দুয়েরই অনুমোদন লাগে।
♦ রাজ্যের সর্বোচ্চ আদালত হাই কোর্টের নিচে থাকে নিম্ন আদালতগুলি। হাইকোর্টের কাজ হল নিম্ন আদালতের আপীলগুলি শুনে তার বিহিত করা। হাইকোর্টের এক্তিয়ারে যে-সব ট্রাইব্যুনাল থাকে তাদের আপীল শোনাও হাই কোর্টের কাজ। হাইকোর্টের বিচারপতিদেরও নিয়োগ করেন রাষ্ট্রপতি। এই নিয়োগের ব্যাপারে রাষ্ট্রপতি সংশ্লিষ্ট রাজ্যের রাজ্যপালের পরামর্শ (এবং প্রধান বিচারপতির – অন্যান্য বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে) নেন। হাই কোর্টের সব বিচারপতিকেই ৬২ বছর বয়সে অবসর নিতে হয়। হাই কোর্টের কোন বিচারপতিকে পদ থেকে অপসারণ করতে হলে লোকসভা ও রাজ্যসভার অনুমোদন দরকার হয়।
♦ রাজ্যের নিম্ন আদালতগুলি দুটি বিভাগে বিভক্ত: একটি ফৌজদারি আদালত বা ক্রিমিন্যাল কোর্ট, অন্যটি দেওয়ানি আদালত বা সিভিল কোর্ট।
♦ ক্রিমিন্যাল বা ফৌজদারী আদালতের সর্বনিম্নে হল ম্যাজিস্ট্রেটের (প্রথম শ্রেণী বা দ্বিতীয় শ্রেণীর) আদালত। তার ওপরের আদালত হল সেশান জজের আদালত। ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতের আপীলগুলি যায় সেশান জজের কোর্টে। আর সেশান জজের বিরুদ্ধে আপীল করতে হলে হাইকোর্টে যেতে হয়।
♦ সিভিল কোর্টের নিম্নতম আদালত হল মুন্সেফ-এর আদালত। মুন্সেফ-এর আদালতের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে আপীল করতে হলে সাব-জজের আদালতে যেতে হয়। সাব-জজের রায়ের বিরুদ্ধে আপীল করতে হলে যেতে হয় জেলা আদালত বা ডিস্ট্রিক্ট কোর্টে। জেলা আদালতের আপীল যায় হাই কোর্টে, হাইকোর্টের আপীল যায় সুপ্রীম কোর্টে। সাধারণত কোনও মামলায় দুইবার আপীল করা যায়। প্রথমবার আইন ও বাস্তব ঘটনার ভিত্তিতে, দ্বিতীয়বার শুধু আইনের ভিত্তিতে।
★ সিভিল আর ক্রিমিন্যাল কেস-এর তফাত্:
সিভিল কেস বা দেওয়ানি মামলা যে কোন ব্যক্তি বা বা সংস্থা অন্য কারোর বিরুদ্ধে আনতে পারে। যে মামলা আনে তাকে বলা হয় বাদী। অন্যপক্ষে ফৌজদারী মামলায় অভিযোক্তা হয় সরকার, অর্থাত্ শুধু সরকার বা গভর্নমেণ্টই ফৌজদারী মামলা আনতে পারে। সিভিল আর ক্রিমিন্যাল আইনের আরেকটা বড় তফাত্ হচ্ছে শাস্তি-সংক্রান্ত। ক্রিমিন্যাল কেস-এ দোষীর শাস্তি** হল সশ্রম (বা বিনাশ্রম) কারাবাস বা অর্থদণ্ড অথবা দুটোই। অর্থদণ্ডের টাকা সরকারের তহবিলে যায়। কোন কোন বিশেষ অপরাধের ক্ষেত্রে দোষীর মৃত্যুদণ্ডও হতে পারে। সিভিল মামলায় হেরে গেলে প্রতিবাদী বা অপরাধীকে কখনোই কারাবাস করতে হয় না। এই মামলায় অপরাধীদের শাস্তি হল বাদীর ন্যায্য দাবী মেনে নেওয়া এবং অপরাধের জন্য বাদীর যে-অর্থ নষ্ট হয়েছে তার ক্ষতিপূরণ দেওয়া। তবে অনেক সময় এই ক্ষতিপূরণ শুধু বাদীর আর্থিক ক্ষতির (সাধারণ অর্থে) পূরণ নয় – অপরাধের জন্য বাদীর সন্মানহানী বা অন্য কোনও ক্লেশ ঘটে থাকলে, তার জন্য একটি আর্থিক ক্ষতিপূরণও কোর্ট ধার্য করতে পারে।
♦ ক্রিমিন্যাল বা ফৌজদারি মামলায় অপরাধ প্রমাণের দায়িত্ব সব সময়ে সরকারের। অভিযুক্তকে ধরে নেওয়া হবে নিরপরাধ বলে। সরকারকে প্রমাণ করতে হবে যে, সে অপরাধী। এর দুয়েকটি ব্যতিক্রম আছে। যেমন, অভিযুক্ত যদি দাবী করে যে, সে আত্মরক্ষার্থে অপরাধ করেছে, অথবা সে সুস্থমস্তিষ্ক নয় বলে দোষী নয়, ইত্যাদি – সেক্ষেত্রে এই দাবীগুলির সত্যতা প্রমাণ করার দায়িত্ব বর্তাবে অভিযুক্তের ওপর। ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত তখনই দোষী বলে সাব্যস্ত হবে – যদি সংশয়াতীত ভাবে প্রমাণিত হয় যে, সেই দোষী।
♦ দেওয়ানি মামলায় অভিযোগকারীকেই তার অভিযোগের সত্যতা প্রমাণ করতে হবে। এক্ষেত্রে দোষী সাব্যস্ত করার জন্য সংশয়াতীত প্রমাণের প্রয়োজন হয় না। মোটামুটি ভাবে অভিযোগের সত্যতা প্রমাণই যথেষ্ঠ।
ভারতীয় আইন – Indian Law / রাষ্ট্রবিজ্ঞনের (Political Science / Indian Polity) আরও তথ্য জানতে winexam.in ওয়েবসাইট ফলো করুন, ধন্যবাদ।