মুঘল সাম্রাজ্য (মধ্যযুগের ভারত) ইতিহাস প্রশ্ন ও উত্তর | History Question and Answer PDF

0
মুঘল সাম্রাজ্য (মধ্যযুগের ভারত) ইতিহাস প্রশ্ন ও উত্তর | History Question and Answer PDF
মুঘল সাম্রাজ্য (মধ্যযুগের ভারত) ইতিহাস প্রশ্ন ও উত্তর | History Question and Answer PDF

মুঘল সাম্রাজ্য (মধ্যযুগের ভারত) ইতিহাস প্রশ্ন ও উত্তর | History Question and Answer

মুঘল সাম্রাজ্য (মধ্যযুগের ভারত) ইতিহাস প্রশ্ন ও উত্তর | History Question and Answer : বন্ধুরা, আজকে আপনাদের জন্য আলোচনা করা হলো মুঘল সাম্রাজ্য (মধ্যযুগের ভারত) ইতিহাস প্রশ্ন ও উত্তর | History Question and Answer । স্কুল, কলেজ ও সমস্ত সরকারি চাকরীর পরীক্ষাতে বা প্রতিযোগিতা মূলক পরীক্ষার জন্য (All Comparative Exam: WBPSC, WBCS, WBP SI, WBP Constable, SSC, School Service, Railway exam etc) মুঘল সাম্রাজ্য (মধ্যযুগের ভারত) ইতিহাস খুবি গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। এই মুঘল সাম্রাজ্য (মধ্যযুগের ভারত) ইতিহাস প্রশ্ন ও উত্তর | History Question and Answer পড়লেই নিশ্চিত কমন পাবেন।

  ইতিহাসে ভালো রেজাল্ট করতে হলে অবশ্যই পড়ুন এই মুঘল সাম্রাজ্য (মধ্যযুগের ভারত) ইতিহাস প্রশ্ন ও উত্তর | History Question and Answer in Bengali । আপনারা যারা বিভিন্ন পরীক্ষার জন্য মুঘল সাম্রাজ্য (মধ্যযুগের ভারত) ইতিহাস প্রশ্ন ও উত্তর | History Question and Answer in Bengali খুঁজে চলেছেন, তারা নিচে দেওয়া প্রশ্ন ও উত্তর ভালো করে পড়তে পারেন। সাথে পিডিফ ফাইলের ডাউনলোড (PDF File Download) লিঙ্ক নীচে দেওয়া হয়েছে।

  মুঘল সাম্রাজ্য (মধ্যযুগের ভারত) ইতিহাস

বাবর ( ১৫২৬-১৫৩০ খ্রিঃ ) :

  • তিনি ছিলেন পিতার দিকে তৈমুরলঙ্গের বংশধর । মাতা চেঙ্গিস খাঁর বংশধর । তারা ছিল চাঘতাই তুর্কি জাতি এবং তারাই মুঘল নামে পরিচিত । 
  • তিনি ছিলেন ফরগনা ( আফগানিস্থান ) রাজের শাসন কর্তা । তিনি মাত্র তার পিতা উমর শেখ মির্জা মারা যাওয়ার পর মাত্র ১২ বছর বয়সে তিনি সম্রাট হন । বাবরকে তার সততার জন্য ‘ কালান্ডার ‘ বলা হত । 
  • তাকে ভারত আক্রমণের জন্য আহ্বান জানিয়েছিল দৌলত খাঁ লােদী ( পাঞ্জাবের সুবাদার ) , আলম । খ ( ইব্রাহিম লােদীর কাকা ) এবং রানা সিংহ । 
  • ১৫২৬ খ্রিঃ প্রথম পানিপথের যুদ্ধে ইব্রাহিম লােদীকে পরাজিত করে দিল্লি দখল করেন । ইব্রাহিম । লােদী লক্ষাধিক সেনাবাহিনী থাকলেও মাত্র বারাে হাজার সেনা নিয়ে ‘ রুমি ’ ও ‘ তুলঘলমা ’ নামক পদ্ধতি ব্যবহার করে যুদ্ধে জয়লাভ করে । তার এই যুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছিল উস্তাদ আলি ও মুস্তফা । 
  • ১৫২৭ খ্রিঃ ঘানুয়ার যুদ্ধে সংগ্রাম সিংহকে পরাজিত করে রাজপুত রাজ্য দখল করেন । এর ফলে বাবরের সাম্রাজ্য শক্তিশালী হয় । এই যুদ্ধের পর তিনি ‘ গাজি ’ উপাধি ধারণ করেন । 
  • ১৫২৮ খ্রিঃ চান্দ্রেরী যুদ্ধে অন্য রাজপুত রাজা মেদিনি রাই কে পরাজিত করে চান্দেরী দুর্গ দখল করেন । 
  • ১৫২৯ খ্রিঃ ঘর্ঘরা যুদ্ধে আফগান রাজা মামুদ লােদীকে ( ইব্রাহিম লােদীর ভাই ) পরাজিত করে ।
  • বাবর ছিলেন মধ্য এশিয়া ও ভারত , তৈমুর ও আকবরের যােগসূত্র । 
  • ৩০ ডিসেম্বর ১৫৩০ খ্রিঃ আগরার আরামবাগে তার মৃত্যু হয় । তার দেহ নিয়ে যাওয়া হয় আরামবাগ থেকে কাবুলে , সেখানে তাকে সমাধিত করা হয় ।
  • বাবর তুর্কি ভাষায় তার আত্মজীবনী তুহুক – ই – বাবরি লিখেছিলেন এটি ছিল ক্লাসিক সাহিত্য । বাবরকে বলাহত প্রথম রাতের কবি।

হুমায়ুন (১৫৩০-৪০ এবং ১৫৫৫-৫৬ খ্রিঃ): 

  • তিনি কাবুলে ১৫০৮ খ্রিঃ জন্মগ্রহণ করেন । তার পিতা বাবর এবং মাতা ছিলেন মহিম বেগম । হুমায়ুন কখনও খারাপ গােলাপ পছন্দ করতেন না । হুমায়ুন তার সাম্রাজ্যকে সুন্দর ভাবে সাজিয়েছিলেন । তার তিন ভাই কামরান , হিন্দাল ও আকরিকে বিভিন্ন প্রদেশের শাসন ভার । দিয়ে তার সাম্রাজ্যকে সুসংগঠিত করেছিল । 
  • দিনপানাহ দিল্লিতে তার দ্বিতীয় রাজধানী স্থাপন করেন ।
  • ১৫৩২ খ্রিঃ দৌরাহর যুদ্ধে মামুদ লােদী ও তার অনুগামী আফগানিদের পরাস্ত করেন ।
  • এই সময় শেরশাহ সুরি তার শক্তি বৃদ্ধি করে ।
  • ১৫৩৯ খ্রিঃ চৌসার কাছে শেরশাহ হুমায়ুনকে আক্রমণ করে এবং চৌসার যুদ্ধে হুমায়ুন ভিষণভাবে পরাজিত হয় এবং কোনাে প্রকারে জলের ব্যাগে পালিয়ে আগ্রায় ফিরে আসে । 
  • কিন্তু ১৫৪০ খ্রিঃ কনৌজ বা বিলগ্রামর যুদ্ধে হুমায়ুন শেরশাহের নিকট পরাজিত হয় এবং পারস্যে পালিয়ে যায় । 
  • ১৫ বছর পর ১৫৫৫ খ্রিঃ তিনি পুনরায় ফিরে আসেন । 
  • ১৫৪৫ খ্রিঃ পারস্য সম্রাটের সহায়তায় কাবুল ও কান্দাহার জয় করেন । 
  • ১৫৫৫ খ্রিঃ তার দক্ষ সেনাপতি বৈরাম খাঁর সহায়তায় প্রথম লাহাের অধিকার করেন এবং ওই বছর ২৩ জুলাই শুর রাজা সিকান্দার শুরকে পরাজিত করে দিল্লি ও আগ্রা দখল করে মুঘল সাম্রাজ্যে পুনপ্রতিষ্ঠা করেন । এবং শুর সাম্রাজ্যের পতন ঘটে ।
  • বৈরাম খাঁ ছিল হুমায়ুনের দক্ষ , বিচক্ষণ ও বাধ্য সহায়ক । তিনি ছিলেন ভারত জয়ের প্রকৃত সহায়ক । হুমায়ুন তাকে তার পরিবারের শ্রেষ্ঠ প্রদীপ বলে অভিহিত করেছিলেন । 
  • দিল্লি দখলের সাত মাস পর ১৫৫৬ খ্রিঃ পাঠাগারের সিঁড়ি দিয়ে পড়ে হুমায়ুনের মৃত্যু হয় । ঐতিহাসিক লেনপুল বলেছিলেন “ হুমায়ুন জীবনকে সমস্যার মধ্যে ছুড়ে দেয় এবং সে নিজেই এটি থেকে মুক্ত করে । ” 
  • হুমায়ুন ‘ ইসান – ই – কামিল ’ ( প্রকৃত মানুষ ) উপাধি ধারণ করেন । 
  • হুমায়ুনের , বােন গুলবদন বেগম ( বৈমাত্রেয় ) হুমায়ুন নামা লিখেছিলেন । 

আকবর ( ১৫৫৬-১৬০৫ খ্রিঃ ) : 

  • জালালউদ্দিন মহম্মদ আকবর ছিলেন হুমায়ুনের পুত্র , মাতা ছিলেন হামিদাবানু বেগম । তিনি । ১৫৪২ খ্রিঃ সিন্ধু প্রদেশের অমরকোটে জন্মগ্রহণ করেন । তিনি লেখাপড়া জানতেন না । 
  • বৈরাম খাঁর অভিভাবকত্বে মাত্র ১৪ বছর বয়সে কালানাউর এর দায়িত্ব নেন । 
  • বৈরাম খাঁর নেতৃত্বে ১৫৫৬ খ্রিঃ দ্বিতীয় পানিপথের যুদ্ধে হিমু বিক্রমাদিত্যকে পরাজিত করে । হিমু ছিল আদিল শাহ শুরির প্রধানমন্ত্রী ও সেনাপতি তিনি দিল্লি পুনরুদ্ধার করে । হিমু ছিল দিল্লির শেষ হিন্দু রাজা । তিনি ১৪ তম ও শেষ রাজা ছিলেন যে বিক্রমাদিত্য উপাধি ধারণ করে ছিলেন ।
  • ১৫৫৬-১৫৬০ খ্রিঃ পর্যন্ত আকবরের শাসন কার্য পরিচালনা করত বৈরাম খাঁ । Mughul Empire at the time of Akbar’s demise ( 1605 AD ) 

আকবরের নবরত্ন :

  • আবুল – ফজল – তিনি ছিলেন আকবর নামার লেখক ও আইন – ই আকবর এর প্রচারক । তিনি আকবরের হিসাব রক্ষকও ছিলেন । তিনি মুঘল সেনাবাহিনীর সেনানায়ক ছিলেন । 
  • ফৈজি – তিনি ছিলেন ঐতিহাসিক আবুল ফজলের ভ্রাতা । তিনি ছিলেন আকবরের Delhi সভাকবি এবং নবরত্নের একজন । তাকে প্রথম নিযুক্ত করা হয় আকবর পুত্রদের শিক্ষক হিসাবে । তিনি লীলাবতীকে Gondwana ( একটি গণিত বই ) ফার্সি ভাষায় অনুবাদ করেছিলেন । 
  • তানসেন – তিনি হলেন রামতনু পান্ডে । Golkunda তিনি ছিলেন একজন যন্ত্রবাদক । সে সর্বদা বাজনা নিয়েই থাকতেন । তিনি গােয়ালিয়র হিন্দু পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন । তিনি রাজা রামচন্দ্রের সভায় বাদক হিসাবে আসায় আকবরের দৃষ্টিগােচর হয় । পরে তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন । তিনি গীটারে সন্তর বাদক । তানসেন মিউজিকে যেন আগুন ঝরাত । তার বিখ্যাত রাগ ছিল মেঘ মলহার ও দীপক । 
  • রাজা বীরবল – বীরবলের আসল নাম মহেশ দাস । তিনি আকবরের সাম্রাজ্যে শাসন কার্যের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন । তিনি ছিলেন হাস্যরসিক / বিদুষক কবি এবং সংগীতজ্ঞ । তার জ্ঞানে মুগ্ধ হয়ে সম্রাট তার নবরত্ন সভায় তাকে স্থান দিয়েছিলেন । তার ডাকনাম ছিল বীরবল । আকবর তাকে রাজা উপাধি দিয়েছিলেন । 
  • রাজা টোডরমল – টোডরমল ছিল আকবরের রাজস্ব বা অর্থমন্ত্রী । তিনি সাম্রাজ্যের উন্নয়নের জন্য সাম্রাজ্যকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করেছিলেন । তার তৈরি করা পদ্ধতির উপর ভিত্তি করে পরবর্তী মুঘল সম্রাটরা রাজ্য চালনা করেছিলেন । টোডরমল শের শাহের সঙ্গে কাজ করেছিলেন । ১৫৮২ খ্রিঃ আকবর তাকে সেরা উপাধি রাজা ও দেওয়ান – ই – অসরফ দেন ।
  • রাজা মান সিংহ – মান সিংহ ছিল অম্বরের রাজা । তিনি আকবরের বশ্যতা স্বীকার করে তার সেনাবাহিনীতে যােগ দেন । তিনি ছিলেন আকবরের প্রধান সেনাপতি । পরবর্তীকালে অম্বরের রাজা বিহারিমলের কন্যাকে আকবর বিবাহ করে এবং তার পুত্র রাজা ভগবান দাসকে আকবরের সহকারী হিসাবে নিযুক্ত করেন । মান সিংহ ছিল আকবরের যুদ্ধ জয়ের মুল কান্ডারী । হলদিঘাটের যুদ্ধ , মেবার জয় , কাবুল অধিকার ও ওড়িশা জয়ের প্রধান ভূমিকায় ছিলেন মান সিংহ ।
  • আবদুল রহিম – খান – ই – খান্না – আবদুল রহিম ছিলেন একজন কবি ও আকবরের সেনাপতিদের মধ্য অন্যতম । তিনি ছিলেন বৈরাম খাঁর পুত্র । বৈরাম খাঁর মৃত্যুর পর তার বিধবা স্ত্রীকে আকবর তার দ্বিতীয় স্ত্রীরূপে গ্রহণ করেন এবং তার শিশুপুত্র আবদুল রহিমকে আপন পুত্র স্নেহে পালন করেন । তিনি মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করলেও ভগবান শ্রীকৃয়ে মুগ্ধ হয়েছিলেন । 
  • ফকির আজিয়াও দিন – তিনি ছিলেন আকবরের মুখ্য উপদেষ্টা ।
  • মােল্লা দো পিয়জা – তিনি মুঘল সাম্রাজ্যের প্রধান উপদেষ্টা ছিলেন । আকবরের আমলে তার উপদেশ সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পেত । 
  • ১৫৬০-১৫৬২ খ্রিঃ পর্যন্ত তার সাম্রাজ্য যুদ্ধ বিদ্যায় লিপ্ত ছিল এই সময় তিনি ছােটো থাকায় তার ধাতৃমাতা মহাম অঙ্গা বা মামাঙ্গা ছায়াসঙ্গীর মতাে থেকেছে । এবং বৈরাম খাঁ শাসন ভার পরিচালনা করত । ১৫৬২ খ্রিঃ বৈরাম খাঁর মৃত্যু হয় ।
  • ১৫৬১ খ্রিঃ তিনি মালব আক্রমণ করেন ১৫৬১ থেকে ৬৪ খ্রিঃ পর্যন্ত এই যুদ্ধ চলে মালব রাজ বাজ বাহাদুরকে পরাজিত করেন । এই সময় তার সেনাপতি ছিল আদম খান ও পীর মহম্মদ। 
  • ১৫৬৪ খ্রিঃ মধ্যপ্রদেশের গড় কাটাঙ্গ আক্রমণ করেন এই সময় রাজা ছিলেন রানি দুর্গাবতী । তিনি চিতােরের শরণাপন্ন হয় কিন্তু তিনি পরাজিত হন ।
  • আকবর সম্পর্ক স্থাপনের পদ্ধতিতে রাজ্য জয় করেছিলেন । ১৫৬২ খ্রিঃ তিনি অম্বর আক্রমণ করেন এবং রাজা বিহারিমল তার বশ্যতা স্বীকার করলে তিনি বিহারিমলের কন্যাকে বিবাহ করেন । এবং বিহারিমলকে জয়পুরের শাসনকর্তা নিযুক্ত করেন । ১৫৮৪ খ্রিঃ রাজপুত্র সেলিমের সঙ্গে রাজা ভগবান দাসের কন্যাকে বিবাহ দিয়ে তিনি তার সাম্রাজ্য মুঘল সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত করেন ।
  • ১৫৭২ খ্রিঃ গুজরাট আক্রমণ করেন এবং তৃতীয় মুজাফর শাহকে পরাজিত করেন । আকবর । বুলন্দ দরওয়াজা ও ফতেপুর সিকরি ( ১৬০২ ) তৈরি করেন । 
  • ১৫৭৬ খ্রিঃ হলদিঘাটের যুদ্ধে রাজা মানসিংহ ( বিহারিমলের পৌত্র ) ও আসিফ খানের নেতৃত্ব রানা প্রতাপকে পরাজিত করে এবং রাজপুত সাম্রাজ্য দখল করে । 
  • রাজা মান সিংহের নেতৃত্বে বাংলা , বিহার ও ওড়িশা দখল করে । 
  • ১৫৯১ খ্রিঃ মান্দ্রেশ ও ১৫৯৫ খ্রিঃ বালুচিস্তান , ফান্দাহার তার সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয় ।
  • ১৫৮৬ খ্রিঃ কাশ্মীর ও ১৫৯৩ খ্রিঃ সিন্দ হয় করেন । 
  • ১৫৯৯ খ্রিঃ দৌলতাবাদের সুলতানা চাদ বিবিকে পরাজিত করে দাক্ষিণাত্য দখল করে । তার শেষ যুদ্ধ ছিল আসির গড় দুশ জয় ১৬০১ খ্রিঃ । 
  • ১৬০৫ খ্রিঃ আকবরের মৃত্যু হয় । তার সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল কাশ্মীর , সিন্দ , কান্দাহার পর্যন্ত বিস্তার লাভ করেছিল । 

জাহাঙ্গীর ( ১৬০৫-১৬২৭ খ্রিঃ ) :

  • আকবর পুত্র সেলিম নুরউদ – দিন – মুহম্মদ – জাহাঙ্গীর নাম ধারণ করে সিংহাসনে বসেন । 
  • তিনি অধিকাংশ সময় কাটাতেন লাহােরে । যেখানে তিনি দিলখুসা উদ্যান ও ভবন নির্মাণ করেছিলেন । 
  • কিন্তু শীঘ্রই তার বড়ােপুত্র খসরু বিদ্রোহ ঘােষণা করেন ।
  • তিনি পঞম শিখ গুরু অর্জুন দেব সিংহকে হত্যা করেন । কারণ গুরু অর্জুন জাহাঙ্গীরের বিদ্রোহী পুত্র খসরুকে আশ্রয় দিয়েছিলেন । 
  • রানা অমর সিংহ ( মহারানা প্রতাপের পুত্র ) ১৬১৫ খ্রিঃ জাহাঙ্গীর বশ্যতা স্বীকার করেন এবং তার পুত্র করণ সিংহকে মুঘল সাম্রাজ্যের মনসবদার পদে নিযুক্ত করেন । 
  • ১৬২২ খ্রিঃ প্যারিস সম্রাট শাহ আব্বাস কান্দাহার দখল করেন এবং মুঘলদের হাতছাড়া হয় । 
  • জাহাঙ্গীর জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হল তিনি শের আফগানির বিধবা স্ত্রী মেহেরুন্নিসাকে ১৬১১ খ্রিঃ বিবাহ করেন । তার নাম দেন নুরজাহান । জাহাঙ্গীর সিংহাসনের পিছনে প্রকৃত শক্তি ছিল তার । 
  • তিনি ছিলেন মুঘল আমলে প্রথম সম্রাজ্ঞী যাকে নিজ গুণের জন্য ‘ পাদশাহ বেগম ’ বলা হত । 
  • নুরজাহান তার পিতা মির্জা গিয়াস বেগ , ভ্রাতা আসফ খাঁ ও যুবরাজ খুররম কে নিয়ে চক্র তৈরি করেছিল । যুবরাজ খুররমের সহিত তার ভ্রাতুস্পুত্রী মমতাজের বিবাহ দেন । তিনি তার পিতা মির্জা গিয়াস বেগকে সাত হাজারি ও ভ্রাতা আসফকে ছয় হাজারি মনসবদারের পদে নিযুক্ত করেন ।
  • জাহাঙ্গীরের সময় আগ্রাতে ইতিমাদ উদ দৌলার স্মৃতি সৌধ নির্মাণ হয় এবং সেকেন্দার আকবরের সমাধির কাজ শেষ করেন জাহাঙ্গীর ।
  • ঐতিহাসিক ক্যান্টেন হকিন্স ( ১৬০৮-১১ ) ভারত ভ্রমণের সময় জাহাঙ্গীরের ৪০০ মনসবদার । দেখে তাকে ইংলিশ খান বলেছিলেন । স্যার টমাস রাে ( ১৬১৫-১৯ ) তার রাজত্বকালে ভারতে এসেছিলেন । 
  • তার সময়কে মুঘল আমলে স্বর্ণযুগ বলা হয় । ১৬২৭ খ্রিঃ জাহাঙ্গীরের মৃত্যু হয় । 

শাজাহান ( ১৬২৮-১৬৫৮ খ্রিঃ ) :

  • তিনি ছিলেন একজন দক্ষ শাসক । তিনি মুঘল সাম্রাজ্যের রাজধানী আগ্রা থেকে দিল্লিতে স্থান্তর । করেন । 
  • তার রাজত্বের প্রথম দিকে বুন্দেল খন্ডের রাজা জুব্বর সিং বিদ্রোহ ঘােষণা করেন এবং দাক্ষিণাত্যের শাসনকর্তা খান জাহান লােদী বিদ্রোহ করেন । তিনি এই বিদ্রোহ দমন করেন। 
  • শাজাহান তার সাম্রাজ্য বিস্তারে সফলতা পেয়েছিল । আহমেদনগর এবং বিজয়পুর তার সাম্রাজ্যের বশ্যতা স্বীকার করে । ১৬৩৬ খ্রিঃ গােলকুন্ডা মুঘলদের বশ্যতা স্বীকার করে ।
  • তিনি উত্তর – পূর্বে রানা প্রতাপ সিংহের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে শ্রীহট্ট জেলা পর্যন্ত সাম্রাজ্য বিস্তার করেন । 
  • তার পুত্র ঔরঙ্গজেবকে দাক্ষিণাত্যের সুবেদার নিযুক্ত করেন । 
  • তার আমলে দিল্লি নগরীর নামকরণ করেন শাজাহানবাদ ’ , আগ্রার নামকরণ করা হয় ‘ আকবরাবাদ ।
  • মুঘল সম্রাট শাজাহান শাজানাবাদের অভ্যন্তরে সুপ্রসিদ্ধ দুর্গ তৈরি করেন । যমুনা নদীর পূর্বে চারটি বড়াে দরজা , দুটি দরজা ও ২ টি বুরুদ সহ নির্মিত হয় এই দূর্গ । যার নাম ছিল ‘ কিলা – ই – মুবারক ’ যা লালকেল্লা নামে পরিচিত । ১৮৫৭ খ্রিঃ পর্যন্ত এটাই ছিল মুঘলদের এবং পরবর্তী রাজাদের রাজধানী । 
  • তার রাজত্ব কালকে মােঘল সাম্রাজ্যের স্বর্ণযুগ বলা হয় । 

তাজমহল :

‘ তাজমহল ’ হল আগ্রার নিকট ভালােবাসার স্মৃতি সৌধ । শাজাহান তার প্রিয় পত্নী আর্জুমান্দ বানু । বেগমকে নাম দেওয়া হয়েছিল ‘ মমতাজ । তার স্মৃতির উদ্দেশ্যে এই সৌধ নির্মাণ করেন । ১৬৩১ খ্রিঃ মমতাজ তার চতুর্থ পুত্রের জন্নের সময় তার মৃত্যু হয় । এই সৌধ তৈরি করতে সময় লেগেছিল ২২ বছর ( ১৬৩১-১৬৫৩ ) । ২২ হাজার মিস্ত্রি প্রতিদিন কাজ করে ২২ বছর ধরে এই সৌধ নির্মাণ করছিল । যার মূল কারিগরি বা নকশা তৈরি প্রধান দায়িত্ব ছিল ঈশা খাঁর হাতে । সাদা মার্বেল পাথরের তৈরি দেয়ালে কোরানের বাণী লিখেছিল আমানত খাঁ মিরজা । মীর আব্দুল করিম এবং মুকরিমল খাঁ তাজমহলের আর্থিক দিক দেখভাল করেছিল । এটি ছিল মুঘল আমলের সর্বশ্রেষ্ঠ । স্থাপত্য নিদর্শন । 

রবীন্দ্র নাথ ঠাকুর বলেছিল -‘ Teardrop on the cheek of eternity ‘ , 

  • শাজাহান শ্বেত পাথরের মােতি মসজিদ তৈরি করেছিলন । এছাড়া তিনি ময়ূর সিংহাসন তৈরি । করেছিলেন যা স্বর্ণদ্বারণ নির্মিত । 
  • তার জীবনের শেষ খুব দুঃখের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হয় ও তার চারপুত্র দারা , সুজা , ঔরঙ্গজেব ও মুরাদ এর মধ্যে বিদ্রোহ শুরু হয়। 

ঔরঙ্গজেব ( ১৬৫৮-১৭০৭ ) : 

  • শাজাহানের চারপুত্র হল দারা সিকো , শাহ সুজা , ঔরঙ্গজেব ও মুরাদ বক্স । এবং তিন কন্যা ছিল জাহান আরা , রােশন আরা এবং গৌহর আরা । 
  • এমত অবস্থায় শাজাহান অসুস্থ হয়ে পড়েণ এবং তার পুত্রদের বিভিন্ন প্রদেশের দায়িত্ব দেন । দারা ছিল দিল্লি , শাহ বাংলা , মুরাদ গুজরাট এবং ঔরঙ্গজেব দাক্ষিণাত্য । 
  • ঔরঙ্গজেব দারাসিকোকে ধর্মাট , সামুগড় ও দেওয়াই এর যুদ্ধে পরাজিত করেছিলেন । এবং আততায়ী দ্বারা নিহত করেন । 
  • ঔরঙ্গজেব ১৬৫৯ খ্রিঃ জানুয়ারি মাসে খাজোয়ার যুদ্ধে সুজাকে পরাস্ত করেন ও নিহত করেন ।
  • ১৬৯০ খ্রিঃ মধ্যে ঔরঙ্গজেবের সাম্রাজ্য পশ্চিমে কাবুল থেকে পূর্বে চট্টগ্রাম ও উত্তরে কাশ্মীর থেকে দক্ষিণে কাবেরী নদী পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল ।
  • ঔরঙ্গজেবের নির্দেশে বাংলার শাসক মীহামুল্লা ১৬৬১ খ্রিঃ কুচবিহার দখল করেন এবং স্থানটির নাম রাখেন আলমগীর নগর ।
  • ১৬৬৩ খ্রিঃ অহােমরাজ জয়ধ্বজ মুঘলদের বশ্যতা স্বীকার করে সন্ধি স্থাপন করেন । 
  • শায়েস্তা খাঁ আরাকান রাজকে পরাজিত করে চট্টগ্রাম এবং মগ ও পাের্তুগিজ জলদস্যুদের পরাজিত করে সন্দীপ দখল করেন । ঔরঙ্গজেব উত্তর – পশ্চিম সীমান্তে ‘ অগ্রসর নীতি ‘ অবলম্বন করেন । 
  • মীর জামুল্লা পরবর্তী বাংলার গভর্নর নিযুক্ত হন ঔরঙ্গজেবের মাতুল শায়েস্তা খান । তিনি পাের্তুগিজদের দমন করে সন্দীপ ( ১৬৬৫ খ্রিঃ ) এবং আরাকানরাজকে পরাস্ত করে চট্টগ্রাম দখল করেন ( ১৬৬৬ খ্রিঃ ) । 
  • ঔরঙ্গজেব খাটি ইসলামীয় আচরণ বিধি সর্বসাধারণের কাছে প্রচারের জন্য রচনা করেন ফতােয়া – ই – আলমগিরি । 
  • ঔরঙ্গজেবের রাজনৈতিক ব্যাপারে উলেমা নির্ভরতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন যে দুজন মুসলিম অভিজাত তারা হলেন — মহাবৎ খাঁ , মীর্জা লারা । 
  • জয়সিংহ , রামসিংহ ও যশােবন্ত সিংহ প্রভৃতি বিখ্যাত রাজপুত সেনাপতি ঔরঙ্গজেবের অধীনে । উচ্চপদে বহাল ছিলেন । 
  • ঔরঙ্গজেব শিখদের নবম গুরু তেগবাহাদুরকে হত্যা করেছিলেন ( ১৬৭৫ খ্রিঃ ) । তাঁর বিখ্যাত উক্তিটি হল ‘ শিরদিয়া সার না দিয়া ‘ । 
  • ঔরঙ্গজেব প্রধানত মারবাড় ও মেবার — এই দুই রাজপুত রাজ্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হন । 
  • ঔরঙ্গজেব দীর্ঘ ত্রিশ বছর রাজপুতানার যুদ্ধে লিপ্ত থাকেন । 
  • রাঠোর বীর দুর্গাদাস ছিলেন মারবাড়ের রাজা যশােবন্ত সিংহের অনুচর ।

পরবর্তী মােঘল শাসকগণ ( ১৭০৭-১৮৫৭ খ্রিঃ ):

বাহাদুর শাহ প্রথম ( ১৭০৭-১২ খ্রিঃ ) – 

  • ঔরঙ্গজেবের মৃত্যুর পর মােঘল সম্রাটরা ছিল পুতুল , রাজ্য প্রধান ছাড়া আর কিছুই ছিলেন না । প্রকৃত ক্ষমতার অধিকার যা অমলবর্গের হাতে । ঔরঙ্গজেবের মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে তাঁর তিন পুত্র মুয়াজ্জম , আজম ও কামবক্স ক্ষমতার অধিকার নিয়ে ভ্রাতৃদ্বন্দ্বে লিপ্ত হন । মুয়াজ্জম ‘ প্রথম বাহাদুর শাহ ‘ উপাধি নিয়ে সিংহাসনে বসেন ১৭০৭ খ্রিস্টাব্দে । অন্যদিকে আজম নিজেকে ‘ সম্রাট ’ হিসাবে ঘােষণা করেন এবং কামবক্স ‘ দিন পনাহা ’ উপাধি নিয়ে সিংহাসন দখল করার চেষ্টা করেন । 
  • শেষ পর্যন্ত বাহাদুর শাহ তার ভাইদের পরাজিত করে প্রথম শাহ আলম ’ উপাধি নেন । ঐতিহাসিক কাফি খাঁ বাহাদুর শাহকে ‘ শাহ – ই – বেখবর ‘ আখ্যা দেন । 
  • তিনি শিবাজির পৌত্র শাহুজি ( শম্ভুজির পুত্র ) -কে ১৮ বছরের বন্দিদশা থেকে মুক্তি দেন । 
  • তিনি মারওয়াড় ও মেবারের স্বাধীনতা স্বীকার করেন । প্রচলিত ‘ জিজিয়া কর তুলে দেন । 

জাহানদার শাহ ( ১৭১২-১৪ খ্রিঃ ) – 

  • বাহাদুর শাহের মৃত্যুর পর তার চার পুত্রের মধ্যে জাহানদার শাহ অন্য ভাইদের পরাস্ত করে ১৭১২ খ্রিস্টাব্দে মােঘল সম্রাট হন । ক্ষমতা পেতে তাকে সাহায্য করেছিল অমাত্য ( আমির ) জুলফিকার খান । দুজন ক্ষমতাশালী অমাত্য আবদুল্লাহ খান ও হুসেন আলি খানের ( যারা সৈয়দ ভ্রাতৃদ্বয় নামে পরিচিত ) দ্বারা জাহানদার শাহ ক্ষমতাচ্যুত হন । 

ফারুকশিয়ার ( ১৭১৩-১৯ খ্রিঃ ) – 

  • সৈয়দ ভ্রাতৃদ্বয়ের সাহায্যে ফারুকশিয়ার জাহানদারকে হত্যা করে দিল্লির সিংহাসনে বসেন । ফারুকশিয়ার জুলফিকতার খানকে হত্যা করেন ।
  • শিখনেতা বান্দা বাহাদুরকে ফরুকশিয়ার ১৭১৬ খ্রিস্টাব্দে মৃত্যুদন্ড দেন । 
  • ১৭১৭ খ্রিস্টাব্দে ইংরেজ দূত সুরম্যানকে বার্ষিক তিন হাজার টাকার বিনিময়ে বিনাশুল্কে বাণিজ্যের ফরমান দেন । 
  • ফারুকশিয়ার সৈয়দ ভ্রাতৃদ্বয়ের ক্ষমতা খর্ব করার চেষ্টা করলে , সম্রাট ফারুকশিয়ার নিজেই সৈয়দ ভ্রাতৃদ্বয় দ্বারা নিহত হন । 
  • রফি – উদ – দরজাতকে ১৭১৯ খ্রিস্টাব্দের ২৮ শে ফেব্রুয়ারি দিল্লির সিংহাসনে বসান ।
  • এর পর সৈয়দ ভ্রাতৃদ্বয় রফি – উদ – দরজাতকে হত্যা করে ১৭১৯ খ্রিস্টাব্দের জুন মাসে রফি – উদ – দৌলাকে দিল্লির সিংহাসনে বসান ।

রফি – উদ দৌলা ( জুন – নভেম্বর ১৭১৯ খ্রিঃ ) – 

  • রফি – উদ – দৌলা দ্বিতীয় শাজাহান উপাধি নেন ।

মহম্মদ শাহ ( ১৭১৯-৪৮ খ্রিঃ ) – 

  • সৈয়দ ভ্রাতৃদ্বয়ের সহযােগিতায় মহম্মদ শাহ সিংহাসনে বসেন । তিনি উনত্রিশ বছর রাজত্ব করেন । 
  • মহম্মদ শাহের পূর্ব নাম ছিল রােশন আকবর । 
  • ১৭২০ খ্রিস্টাব্দে মহম্মদ শাহ সৈয়দ ভ্রাতৃদ্বয়কে হত্যা করেন । 
  • এই মােঘল সম্রাট কত্থক নৃত্যে পারদর্শী ছিলেন । তিনি শাসনকার্যের থেকে আমােদ – প্রমােদ ও নানাবিধ রঙ্গ তামাশায় মত্ত থাকতেন । সে কারণে মহম্মদ শাহ ইতিহাসে ‘ রঙ্গীলা বাদশাহ নামে পরিচিত ছিলেন । 
  • তার সময় হায়দ্রাবাদের নিজাম বংশ , মুরশিদকুলি খাঁর নেতৃত্বে বাংলা – বিহার – উড়িষ্যা ও রােহিলাখন্ড স্বাধীন রাজ্য হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেন । 
  • মহম্মদ শাহের রাজত্বকালে ১৭৩৯ খ্রিস্টাব্দে পারস্য সম্রাট নাদির শাহ ভারত আক্রমণ করেন । 
  • নাদির শাহ কোহিনুর মণি , ময়ূর সিংহাসন সহ প্রচুর ধনসম্পদ নিয়ে পারস্যে ( ইরানে ) ফিরে যান । বর্তমানে ময়ূর সিংহাসন লন্ডন মিউজিয়ামে রয়েছে । 

আহম্মদ শাহ ( ১৭৮৪-৫৪ খ্রিঃ ) –

  • তার সময় আফগানিস্তানের শাসক আহম্মদ শাহ আবদালী প্রথম ভারত আক্রমণ করেন । 
  • ১৭৫৪ খ্রিস্টাব্দে মারাঠা নাঠক মলহার রাও হােলকার দিল্লি আক্রমণ করেন । 
  • আহম্মদের উজির ( প্রধানমন্ত্রী ) ইমাদ – উল – মুলক আহম্মদকে দুই চোখ অন্ধ করে আজিজুদ্দিনকে সিংহাসনে বসান । 

আজিজুদ্দিন দ্বিতীয় আলমগীর ( ১৭৫৪-৫৯ খ্রিঃ ) – 

  • ইমাদ – উল – মুলুকের সহযােগিতায় আজিজুদ্দিন দ্বিতীয় আলমগীর ’ নামে মােঘল সম্রাট হন । সিংহাসনে বসেই সম্রাট ইমাদ – উল – মুলুকের প্রধান সেনাপতি বলবাস খানকে হত্যা করেন । এর পর ইমাদ – উল – মুলুক রেগে গিয়ে দ্বিতীয় আলমগীরকে হত্যা করেন এবং তার পুত্র যুবরাজ আলি গহ্বরকে দিল্লির সিংহাসনে বসান । 

আলি গহবর দ্বিতীয় শাহ আলম ( ১৭৫৯-১৮০৬ খ্রিঃ ) –

  • আলি গহ্বর দ্বিতীয় শাহ আলম ’ নামে দিল্লির সিংহাসনে বসেন ।
  • ১৭৬৪ খ্রিস্টাব্দে বক্সারের যুদ্ধে ইংরেজদের কাছে তিনি হেরে যান ।
  • ১৮৬৫ খ্রিস্টাব্দে দ্বিতীয় শাহ আলম বার্ষিক ২৬ লক্ষ টাকার বিনিময়ে ‘ বাংলা – বিহার – উড়িষ্যার দেওয়ানী অধিকার ( রাজস্ব আদায়ের অধিকার ) ইংরেজকে দিতে বাধ্য হন।
  • ১৮০৩ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশরা দিল্লি অধিকার করে । এর পর মােঘলদের প্রধান ও একমাত্র বাসস্থান । ও কর্মস্থল ছিল আগ্রা ।
  • দ্বিতীয় আকবর ( ১৮০৬-৩৭ ) : তিনি রামমােহন রায়কে রাজা উপাধিদেন । তিনি রাজা রামমােহেন রায়কে উচ্চশিক্ষার লন্ডন পাঠান ।

দ্বিতীয় বাহাদুর শাহ ( ১৮৩৭-৫৭ ) – 

  • ইনি ছিলেন শেষ মােঘল সম্রাট । ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে মহাবিদ্রোহে অংশগ্রহণ করার অপরাধে দ্বিতীয় বাহাদুরকে রেঙ্গনে নির্বাসন দেন ইংরেজরা । তার পরিবারের সবাইকে হত্যা করে ইংরেজরা । শেষ মােঘল সম্রাট রেঙ্গনে নির্বাসিত অবস্থায় ১৮৬২ খ্রিস্টাব্দে দেহত্যাগ করেন । 
  • সিপাহি বিদ্রোহ ( মহাবিদ্রোহ ) -র সময় হিন্দুস্তানের সিপাহিরা দ্বিতীয় বাহাদুর শাহকে “ হিন্দুস্তানের সম্রাট ‘ বলে ঘােষণা করেছিলেন ।

মােঘল আমলের দরবারী রাজনীতি – 

  • মােঘল আমলে আমির ওমরাহদের মধ্যে তিনটি গােষ্ঠী বিদ্যমান ছিল । যথা – ইরানী , তুরানী ও হিন্দুস্তানী । 

মুঘল শাসন ব্যবস্থা :

  • প্রথম অবস্থায় তাদের সাম্রাজ্যকে সুবায় বিভক্ত করা হত । সুবা হল সরকার । সরকার থেকে পরগনা এবং পরগনা থেকে গ্রাম । 
  • বাবর ও হুমায়ুনের প্রধানমন্ত্রীদের বলা হত ভকিল । কিন্তু ভকিল ছিল বৈরাম খাঁর সময় পর্যন্ত । 
  • উজির ছিল প্রধানমন্ত্রী । 
  • দেওয়ান ছিল ভূমি রাজস্ব মন্ত্রক বা বিভাগ । 
  • মীর বক্সি – ছিল সেনাবাহিনী বিভাগ । 
  • মান – ই – সামান – প্রকৃত গৃহ কর্তা । 
  • কাজি – উল – কাজাট – বিচার বিভাগ , কাজিকে সাহায্য করত মুফতি । 
  • সাদর – উস – সাদর – সংস্কৃতি ও ধর্মীয় মন্ত্রক। 
  • মুস্তাফি – লেখক । 
  • আমিল – জনসাধারণের বিচারক এবং বিচারব্যবস্থা সহায়ক । 
  • কুয়ানুনগাে – প্রধান হিসাব রক্ষক । 
  • লাম্বারদার – গ্রাম প্রধান । 
  • আকবরে সময় ১৫ টি সুবা ছিল । ঔরঙ্গজেবের আমলে ২১ টি সুবা পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয় । 
  • জমিকে ভাগ করা হয়েছিল খালিমা ( শস্যের জমি ) , জাগির ( উন্নত শস্যর জমি ) এবং ইনাম ( উন্নত জমি ও বাসস্থান ) । 

মােঘল সম্পর্কিত তথ্যসমূহ : 

  • দিল্লির সুলতানরা চিত্রকলার সমঝদার না হলেও সে যুগে প্রাদেশিক মুসলিম শাসকরা চিত্রকলার সমাদর করতেন । 
  • সুলতানি আমলে জৈনপুর , মা , আমেদাবাদ প্রভৃতি স্থানের মুসলিম শাসকগণের পৃষ্ঠপােষকতায় ‘ মিনিয়েচার ‘ চিত্রের বিকাশ ঘটেছিল । 
  • জৈন মন্দির সংলগ্ন পাঠাগার বা জ্ঞানভাণ্ডারে মিনিয়েচার চিত্রের বহু নিদর্শন দেখা যায় । 
  • মােঘল চিত্রকলায় প্রাকৃতিক দৃশ্য , গাছ , পশু পাখির চিত্র বিষয়বস্তু হিসাবে স্থান পায় । 
  • মােঘল চিত্রকলা ‘ রাজ দরবারে বিকশিত হয় ।
  • মােঘল সম্রাটের মধ্যে আকবরই প্রথম যিনি চিত্র কারখানা প্রতিষ্ঠা করেন । 
  • হুমায়নের আমলে দুজন বিখ্যাত পারসিক শিল্পী আবদুস সামাদ ও মীর সৈয়দ আলি পারস্য । থেকে ভারতে আসেন । কিন্তু এদের শৈল্পিক বিকাশ ঘটে আকবরের আমলে । 
  • মীর সৈয়দ আলি এসেছিলেন তাব্রিজ থেকে , আবদুস সামাদ এসেছিলেন সিরাজ থেকে । 
  • অনুচিত্র সৃষ্টির দক্ষতার জন্য খাজা আবদুস সামাদ ‘ শিরিন – কালাম ’ বা ‘ সুন্দর কলম ’ উপাধি পেয়েছিলেন । 
  • মীর সৈয়দ আলি পিতা মীর মুসাবির পারস্যের শাহ তহ মাসপের দরবারে প্রতিষ্ঠিত শিল্পী ছিলেন । 
  • মীর সৈয়দ আলি হুমায়নের কাছ থেকে নাদির – উল – অদ্র ( পৃথিবীতে অতুলনীয় ) উপাধি গ্রহণ । করেন । 
  • আকবরের বাল্যকালের ছবি ‘ হামজানামা ’ নামক পাণ্ডুলিপিতে পাওয়া যায় । যাতে ১২০০ চিত্র ছিল । 
  • আবুল ফজলের মতে আকবরের ১৭ জন চিত্রকরের মধ্যে ১৩ জনই ছিলেন হিন্দু । 
  • পারসিক চিত্রধারা অনুসারে মােঘল ভারতীয় চিত্রধারা বিকাশে দুটি উল্লেখযােগ্য চিত্রকর হলেন বায়াজিদ এবং তার শিষ্য আগামারিক । 
  • মােঘল সম্রাট জাহাঙ্গীর ছিলেন খাটি কলা রসিক লােক । শিল্পের জন্য শিল্প ’ এই তত্ত্বে তিনি বিশ্বাসী ছিলেন । 
  • জাহাঙ্গীরের আমলেই মুঘল চিত্র শিল্পের সুবর্ণযুগ শুরু হয় । 
  • স্যার টমাস রাে জাহাঙ্গীরকে একজন চিত্রকলার শ্রেষ্ঠ অনুরাগী বলে অভিহিত করেন। 
  • জাহাঙ্গীর একমাত্র মুঘল সম্রাট যিনি প্রকৃতির আকর্ষণে ১৯ বার কাশ্মীর পরিভ্রমণ করেন । 
  • জাহাঙ্গীরের দরবারের প্রধান চিত্র শিল্পী হলেন হিরাটের প্রখ্যাত শিল্পী আকা – রিজা । যিনি পারস্যের বিখ্যাত শিল্পী আবু – ই – হাসানের পুত্র । 
  • জাহাঙ্গীরের আমলে বিরল পশুপাখির চিত্রাঙ্কনে সবচেয়ে দক্ষ ছিলেন ওস্তাদ মনসুর । 
  • আকা রিজার শিল্পকর্মে সন্তুষ্ট হয়ে সম্রাট জাহাঙ্গীর তাকে “ নাসির – উস – জামান ” ( যুগের বিস্ময় ) উপাধি দেন । 
  • জাহাঙ্গীরের আমলে প্রতিকৃতি অঙ্কনে অদ্বিতীয় ছিলেন বিষেণ দাস । 
  • জাহাঙ্গীর বিষেণ দাসকে প্রতিকৃতি অঙ্কন শিক্ষার জন্য পারস্যে পাঠিয়ে ছিলেন । 
  • জিশু খ্রিস্টের ছবি জাহাঙ্গীরের সবচেয়ে প্রিয় ছিল । 
  • জাহাঙ্গীরের দরবারে নিযুক্ত ফারুক বেগ ছিলেন একজন মােঙ্গালীয় চিত্রশিল্পী । 
  • ওস্তাদ মনসুরের আঁকা সাইবেরীয়ান সারসটি কলকাতা জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে । 
  • জাহাঙ্গীরের আমলে প্রারম্ভিক মুঘলরীতির ‘ তিন চতুর্থাংশমুখ চিত্রণের স্থলে ‘ অর্ধমুখচিত্রণ ‘ রীতি প্রচলিত হয় । 
  • দশরথের পুত্রেষ্ঠি যজ্ঞ , রাবণের সীতাহরণ ও জটায়ু বিষেণ দাসের আঁকা বিখ্যাত চিত্র । 
  • জাহাঙ্গীরের সময়ই সর্বপ্রথম ইউরােপীয় চিত্রশিল্প ভারতীয় শিল্পীদের প্রভাবিত করে ।
  • জাহাঙ্গীরের আমলে চিত্রকর বিচিত্র ও আবুল হাসানের মৌলিক প্রয়াসের ফলে রূপকাত্মক চিত্রকলা দ্রুত বিকাশ লাভ করেছিল । 
  • পার্সিব্রাউনের মতে — ‘ জাহাঙ্গীরের প্রস্থানের সঙ্গে সঙ্গে মুঘল চিত্রশিল্পের আত্মা বিলুপ্ত হয়। 
  • জাহাঙ্গীর পুত্র শাজাহান স্থাপত্য শিল্পের অনুরাগী হওয়ায় , চিত্রশিল্প অবহেলিত হয় । 
  • শাজাহান ব্যক্তিগত ভাবে নিজের বীরত্বমূলক চিত্রাঙ্কনের প্রতি বিশেষ অনুরাগ দেখান । 
  • শাজাহানের পুত্র দারাসিকো চিত্রশিল্পের পূজারি ছিলেন । তার চিত্রাবলির অ্যালবাম ইন্ডিয়া অফিস লাইব্রেরিতে রক্ষিত আছে । 
  • ঔরঙ্গজেবের মতে চিত্রাঙ্কন ছিল বিলাসিতা এবং ইসলামের আদর্শ বিরােধী । 

মধ্যকালীন ভারতে শিখ সম্প্রদায়ের অভ্যুত্থান :

গুরু নানক ( ১৪৩৯-১৫৩৯ ) – 

  • গুরু নানকের জন্ম হয় ক্ষত্রী পরিবারে । ১৪৬৯ খ্রিঃ পাঞ্জাবের লাহােরের তালবন্দী গ্রামে ( বর্তমানে নানাকানা সাহিব জন্মগ্রহণ করেন ) । তার আত্মজীবনী হল ‘ জনমসাথী ‘ । 
  • শিখ ধর্মের প্রবর্তক ছিলেন গুরু নানক । শিখ শব্দের অর্থ ‘ শিষ্য । নানক নিখুঁণ ও একেশ্বরবাদে বিশ্বাসী ছিলেন । নানকের শিষ্যদের নাম ছিল শিষ বা শিখ । যে জন্য এই সম্প্রদায় ‘ শিখ ’ ও এই ধর্মের নাম হয় শিখ ধর্ম । 
  • গুরু নানক ছিলেন দিল্লির সুলতান সিকান্দার লােদীর সমসাময়িক । 

দ্বিতীয় গুরু অঙ্গদ ( ১৫৩৯-৫২ ) – 

  • নানক শিষ্য লেহনা বা লহিন ‘ গুরু অঙ্গদ ’ নাম নিয়ে দ্বিতীয় শিখ গুরু পদে উপবেশন করেন ।
  • গুরু অঙ্গদ এর আমলে শিখগণ সুসংঘবদ্ধ সম্প্রদায় রূপে আত্মপ্রকাশ করে । একে ‘ Corporate Personality বলা হত । 
  • গুরু অঙ্গাদই গুরু নানকের স্তোত্রগুলির সংকলনের কার্য শুরু করেন এবং সেগুলি একত্রিত করে । গুরু বাণী প্রকাশ করেন । * মুঘল সম্রাট হুমায়ুন গুরু অঙ্গাদের সহিত সাক্ষাৎ করেন । 

তৃতীয় গুরু অমরদাস ( ১৫৫২-৭৪ ) –

  • গুরু অঙ্গদের পর তৃতীয় শিখ গুরু হলেন অমরদাস , যিনি ১৫৫২ খ্রিঃ ৭৩ বছর বয়সে শিখ গুরু হন । 
  • গুরু অমর দাস শিখপন্থীকে ২২ টি মঞ্জিতে বিভক্ত করেন । সেখানে একজন করে মহন্ত দায়িত্বে থাকত । 
  • গুরু অমর দাসের জন্য গােইন্দওয়ালে একটি বাণিজ্য কেন্দ্র গড়ে ওঠে । সেখানেই তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন মুঘল সম্রাট আকবর ।
  • গুরু অমরদাসের সময় শিখরা দুটি সম্প্রদায়ে বিভক্ত ছিল যথা —১ ) গৃহী শিখ ও ( ২ ) গৃহত্যাগী শিখ । 
  • গৃহত্যাগী শিখ সন্ন্যাসীগণ ‘ উদাসী ’ নামে পরিচিত । 

চতুর্থ গুরু রামদাস ( ১৫৭৫-৮১ ) – 

  • গুরু অমরদাস তার জামাতা গুরু রামদাসকে চতুর্থ গুরু ঘােষণা করেন । তার সময় থেকেই গুরুপদ বংশানুক্রমিক হয় । গুরু রামদাস ‘ সােধি ’ বংশে জন্মগ্রহণ করেন । রামদাস ছিলেন অমরদাস কন্যা বিবিভানির স্বামী । ১৫৭৭ খ্রিঃ আকবর শিখদের চতুর্থ গুরু রামদাসকে অমৃতসরে একটি পুষ্করিনী ও একখণ্ড ভূমি ( ৫০০ বিঘা ) দান করেন । গুরু রামদাসের সময় পবিত্র অমৃতসর শহরে স্বর্ণমন্দির নির্মাণ কার্য শুরু হয় । ১৫৮১ খ্রিঃ গুরু রামদাসের মৃত্যু হয় । 

পঞ্চম গুরু অর্জুন ( ১০৮১-১৬০৬ ) –

  • ১৫৮১ খ্রিঃ গুরু অর্জুন শিখগুরু পদ লাভ করেন । তিনি হলেন শিখদের পঞম গুরু । গুরু অর্জুনের সময় শিখধর্ম ও সম্প্রদায় , হিন্দু ধর্ম ও সম্প্রদায় থেকে পৃথক হয়ে যায় ।
  • গুরু অর্জুন শিখদের পবিত্রতম ধর্মশাস্ত্র “ আদিগ্রন্থ ” বা “ গ্রন্থসাহেবের সংকলন করেন ( ১৬০৪ খ্রিঃ ) । এতে ৫,৮৯৪ টি স্তোত্র রয়েছে ।
  • বিদ্রোহী মুঘল শাহজাদা খসরুকে সাহায্যের অভিযােগে মােগল সম্রাট জাহাঙ্গীর গুরু অর্জুনকে প্রাণদণ্ড দেন ( ১৬০৬ খ্রিঃ ) ।

ষষ্ঠ গুরু হরগােবিন্দ ( ১৬০৬-৪৪ ) –

  • ১৬০৬ খ্রিঃ হরগােবিন্দ ষষ্ঠ গুরু পদে আসীন হন । তিনি “ সাচ্চাবাদশাহ ” উপাধি ধারণ করেন ।
  • গুরু হরগােবিন্দকে গােয়ালিয়র জেলে মুঘ । সম্রাট জাহাঙ্গীর বন্দি করে রাখেন ।
  • গুরু হরগােবিন্দের সঙ্গে মুঘল সম্রাট শাজাহানের সংঘাত সৃষ্টি হয় । কর্তারপুর যুদ্ধে হরগােবিন্দ জয়লাভ করেন এবং এখানেই নতুন কর্মকেন্দ্র স্থাপন করেন । ১৬৪৫ খ্রিঃ গুরু হরগােবিন্দ মৃত্যুবরণ করেন । 

সপ্তম গুরু হররাই ( ১৬৪৪-৬১ ) –

  • শিখদের সপ্তম গুরু হলেন গুরু হররাই । হররার জ্যেষ্ঠপুত্র রামরায়ের পরিবর্তে শিশুপুত্র হরকিষেণকে পরবর্তী শিখগুরু মনােনীত করেন । 

অষ্টম গুরু হরকিষেণ ( ১৬৬১-৬৪ ) –

  • ১৬৬১ খ্রিঃ গুরু হরকিষেণ অষ্টম গুরু পদ লাভ করেন । গুরু হরকিষেণ মুঘল সম্রাট ঔরঙ্গজেবের দরবারে বসন্তরােগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান । 

নবম গুরু তেগবাহাদুর ( ১৬৬৪-৭৫ ) –

  • ১৬৬৪ খ্রিঃ শিখদের নবমগুরু গুরু রূপে তেগবাহাদুর আত্মপ্রকাশ করেন । তিনি অত্যন্ত তেজস্বী ব্যক্তিত্ব ছিলেন । 
  • গুরু তেগবাহাদুর এর প্রধান কর্মকেন্দ্র ছিল আনন্দপুর । তিনি বাংলা , বিহার , অসম পরিভ্রমণ করেন । 
  • গুরু তেগবাহাদুরকে ঔরঙ্গজেব লালকেল্লার অদূরে শিরােচ্ছেদ করে হত্যা করেন ( ১৬৭৫ খ্রিঃ ) । দশম গুরু গােবিন্দ সিংহ ( ১৬৭৫-১০৭৮ ) ।
  • গুরু তেগবাহাদুরের পুত্র গােবিন্দ সিংহ দশম গুরু পদ ( ১৬৭৫ খ্রিঃ ) লাভ করেন ।
  • গুরু গােবিন্দ সিংহ শিখ জাতির এক মহাসম্মেলন ডেকে ৫ জন শিখ নেতাকে মনােনয়ন করেন । যারা ‘ প – পিয়ারে ’ নামে পরিচিত । তিনি ‘ পাহুল ’ বা দীক্ষা প্রথা চালু করেন । 
  • গুরু গােবিন্দ এর সময় থেকে শিখ গুরুগণ নামের শেষে ‘ সিংহ ‘ কথাটি ব্যবহার করেন । 

মারাঠা উত্থান – শিবাজী :

  • পূর্ণনাম – শিবাজী শাহজী ভোসলে । 
  • শিবাজীর বিমাতা – তুকাবাঈ । 
  • জন্মকাল – ১৬২৭ খ্রিঃ ১০ এপ্রিল ( মতান্তরে ১৯ ফেব্রুয়ারি , ১৬৩০ খ্রিঃ ) । 
  • জন্মস্থান – মহারাষ্ট্রের পুনের জুন্নার শহরের নিকট শিবনারের পার্বত্য দুর্গ ।
  • মাতা – জীজাবাঈ ( প্রাচীন যাদব বংশীয় জায়গিরদার যাদবাও – এর কন্যা ) । 
  • পিতা – শাহজী ভোসলে । ( বিজাপুরের সুলতানের অধীনস্থ জায়গিরদার ) ।
  • মুম্বাই কোঙ্কন , খান্দেশ , বেরার মারাঠাবাদ অল রূপে অভিহিত করা হয় । 
  • শিশু শিবাজী ও তার মাতা জীজাবাঈ , দাদাজী কোণ্ডদেব নামক জনৈক ব্রাহ্মণের তত্ত্বাবধানে পুনায় বসবাস করেন । শিবাজীর ধর্মগুরু হলেন — মহারাষ্ট্রের প্রখ্যাত সাধক রামদাস স্বামী । দাদাজী কোণ্ডদেব শিবাজীকে অস্ত্রচালনা ও অশ্বারােহণ প্রভৃতি বিষয়ের শিক্ষা দেন । শিবাজী হায়দার আলি , রনজিৎ সিং মতােই নিরক্ষর ছিলেন । শিবাজী পশ্চিমঘাট পর্বতমালার অধিবাসী মাওলীদের নিয়ে এর সুশিক্ষিত সেনাবাহিনী গঠন করেন । 
  • শিবাজী সর্বপ্রথম সামরিক অভিযান চালিয়ে বিজাপুরের তােরনা দুর্গটি অধিকার করেন ( ১৬৪৭ খ্রিঃ ) ।
  • শিবাজীর রাজধানী রায়গড় দুর্গে স্থাপিত হয় । তার নির্মিত জলবেষ্টিত দুর্গগুলি হল ‘ সুবর্ণগিরি ও জয়নগর।
  • ১৬৫৯ খ্রিঃ শিবাজী বিজাপুরের সেনাপতি আফজল খাকে “ বাঘনখ ” দ্বারা হত্যা করেন । 
  • শিবাজীর বিখ্যাত নৌ সেনাপতি ছিলেন ইব্রাহিম খান ও দৌলত খান । 
  • শিবাজীর শক্তির প্রধান কেন্দ্র হল — দুর্গ । শিবাজীর অধিকৃত দুর্গের সংখ্যা ২৪০ ( মতান্তরে ২৮০ টি ) , যাদের মধ্যে উল্লেখযােগ্য রায়গড় , প্রতাপগড় , পুরন্দর , তােরনা , শিবল , কোণ্ডলা , কোলাপুর , পানহালা , জাবলী , চকন , সিংহগড় , বড়মতি , ইন্দ্রপুর প্রভৃতি ।
  •  মােঘল সম্রাট ঔরঙ্গজেব তার মাতুল শায়েস্তা খাঁকে দক্ষিণে শিবাজীকে দমনের জন্য ১৬৬০ খ্রিঃ নিয়ােগ করেন । 
  • ১৬৬৪ ও ১৬৭০ খ্রিঃ শিবাজী মােট দুইবার মুঘল সাম্রাজ্যের বিখ্যাত বন্দর সুরাট লুণ্ঠন করেন ও প্রচুর ধনসম্পদ হস্তগত করেন ।
  • ১৬৬৫ খ্রিঃ শিবাজী ও মােগলদের ( ঔরঙ্গজেব ) মধ্যে পুন্দরের সন্ধি স্বাক্ষরিত হয় । 
  • পুরন্দরের সন্ধির দ্বারা ঔরঙ্গজেবকে শিবাজী ২৩ টি দুর্গ ও ১৬ লক্ষ টাকা বার্ষিক আয়ের জনপদ সমর্পণ করে । 
  • ঔরঙ্গজেব তার রাজত্বের শেষ ২৫ বছর ( ১৬৮২-১৭০৭ খ্রিঃ ) দাক্ষিণাত্যে কাটিয়েছিলেন। 
  • ঔরঙ্গজেবের দীর্ঘ প্রচেষ্টার পর বিজাপুর ( ১৬৮৬ খ্রিঃ ) এবং গােলকুন্ডা ( ১৬৮৭ খ্রিঃ ) জয় করেন । বিজাপুরের শেষ সুলতান সিকান্দার ও গােলকুন্ডার শেষ সুলতান আবুল হাসন দৌলতাবাদ দুর্গে বন্দি থাকেন । 
  • ঔরঙ্গজেব ১৬৯৭ খ্রিঃ তাঞ্জোর ও ত্রিচিনাপল্লি – র হিন্দু রাজ্য দুটি জয় করেন । দিল্লি ও মথুরা অঞলের কৃষিজীবী সম্প্রদায় ছিল জাঠ। 
  • ১৬৬৯ খ্রিঃ তিলপতের জমিদার গােকলা জাঠ বিদ্রোহে নেতৃত্ব দেয় । পরবর্তীকালে রাজারাম ও চুড়ামন এই বিদ্রোহে নেতৃত্ব দেয় । জাঠ বিদ্রোহ শেষ হয় ভরতপুর রাজ্য প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে । 
  • বুন্দেলরা ছিল মধ্য ভারতের এক রাজপুত গােষ্ঠী । বুন্দেলা বিদ্রোহে নেতৃত্ব দেন বুন্দেলখণ্ডের রাজা চম্পৎ রায় । 
  • ১৬৭১ খ্রিঃ তার পুত্র ছত্রশাল পুনরায় বিদ্রোহ ঘােষণা করেন । 
  • ১৭৩১ খ্রিঃ ছত্রশাল পূর্ব মালবে একটি ছােটো স্বাধীন হিন্দুরাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন । পান্না হয় তার । 
  • ১৬৬৮ খ্রিঃ ঔরঙ্গজেব শিবাজীকে ‘ রাজা ’ উপাধি দেন ও বেবারে একটি জায়গির প্রদান করেন । 
  • ১৬৮৯ খ্রিঃ ১১ মার্চ ঔরঙ্গজেব মারাঠা রাজ শম্ভুজীকে নৃশংসভাবে হত্যা করেন । 
  • ঔরঙ্গজেবের কন্যা জেব উন্নিসার পৃষ্ঠপােষকতায় বিখ্যাত কবি আব্দুল কাদির বেদী চিস্তি সন্তদের ধর্মসমন্বয়বাদকে অনুসরণ করে কাব্য রচনা করেন । 
  • ঔরঙ্গজেবের আমলে বিখ্যাত লেখক ঐতিহাসিক ছিলেন কাফী খাঁ । গ্রন্থটির নাম মুন্তাখাব উল – বাব । 
  • ১৭০২ খ্রিঃ ঔরঙ্গজেবের বিদূষী কন্যা জেব উন্নিসার মৃত্যু হয় । 
  • ১৭০৪ খ্রিঃ তার বিদ্রোহী জৈষ্ঠ্যপুত্র আকবর পারস্যে পরলােক গমন করেন । 
  • ১৭০৭ খ্রিঃ ৩ মার্চ শুক্রবার দাক্ষিণাত্যের আহমেদনগরে ভারতবর্ষের সর্বপ্রথম সর্ববৃহৎ সাম্রাজ্যের স্রষ্টা ঔরঙ্গজেব পরলােক গমন করেন ।

FILE INFO : মুঘল সাম্রাজ্য (মধ্যযুগের ভারত) ইতিহাস প্রশ্ন ও উত্তর | History Question and Answer with PDF Download for FREE

PDF Name : মুঘল সাম্রাজ্য (মধ্যযুগের ভারত) ইতিহাস | History Question and Answer PDF

Formet : PDF File

Price : Free

Download Link : Click Here To Download

Get the History Suggestion Question and Answer by winexam.in

 West Bengal and All India Job preparation  Suggestion Question and answer prepared by expert subject teachers. History Suggestion with 100% Common in the Examination.

History Suggestion Question and Answer

History Suggestion Question and Answer Download. History short question suggestion. All Comparative exam History Suggestion  download. History All exam Question Paper  download.

মুঘল সাম্রাজ্য (মধ্যযুগের ভারত) ইতিহাস প্রশ্ন ও উত্তর – History Question and Answer in Bengali

মুঘল সাম্রাজ্য (মধ্যযুগের ভারত) ইতিহাস – প্রশ্ন উত্তর | মুঘল সাম্রাজ্য (মধ্যযুগের ভারত) ইতিহাস প্রশ্ন ও উত্তর (History Question and Answer in Bengali) । মুঘল সাম্রাজ্য (মধ্যযুগের ভারত) ইতিহাস – প্রশ্ন উত্তর | মুঘল সাম্রাজ্য (মধ্যযুগের ভারত) ইতিহাস প্রশ্ন ও উত্তর (History Question and Answer in Bengali)।

মুঘল সাম্রাজ্য ইতিহাস প্রশ্ন ও উত্তর – History Question and Answer in Bengali

মুঘল সাম্রাজ্য ইতিহাস – প্রশ্ন উত্তর | মুঘল সাম্রাজ্য (মধ্যযুগের ভারত) ইতিহাস প্রশ্ন ও উত্তর (History Question and Answer in Bengali) । মুঘল সাম্রাজ্য ইতিহাস – প্রশ্ন উত্তর | মুঘল সাম্রাজ্য (মধ্যযুগের ভারত) ইতিহাস প্রশ্ন ও উত্তর (History Question and Answer in Bengali)। মুঘল সাম্রাজ্য ইতিহাস – প্রশ্ন উত্তর

মধ্যযুগের ভারত ইতিহাস প্রশ্ন ও উত্তর – History Question and Answer in Bengali

মধ্যযুগের ভারত ইতিহাস – প্রশ্ন উত্তর | মুঘল সাম্রাজ্য (মধ্যযুগের ভারত) ইতিহাস প্রশ্ন ও উত্তর (History Question and Answer in Bengali) । মধ্যযুগের ভারত ইতিহাস – প্রশ্ন উত্তর | মুঘল সাম্রাজ্য (মধ্যযুগের ভারত) ইতিহাস প্রশ্ন ও উত্তর (History Question and Answer in Bengali)। মধ্যযুগের ভারত ইতিহাস প্রশ্ন ও উত্তর।

মুঘল সাম্রাজ্য (মধ্যযুগের ভারত) ইতিহাস সাজেশন – History Suggestion

মুঘল সাম্রাজ্য (মধ্যযুগের ভারত) ইতিহাস সাজেশন পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারতবর্ষের সমস্ত চাকরির পরীক্ষার সিলেবাস বা পাঠ্যসূচি অনুযায়ী  মুঘল সাম্রাজ্য (মধ্যযুগের ভারত) ইতিহাস বিষয়টির সমস্ত প্রশ্নোত্তর। সামনেই পরীক্ষা, তার আগে winexam.in শিক্ষার্থীদের সুবিধার্থে নিয়ে এল মুঘল সাম্রাজ্য (মধ্যযুগের ভারত) ইতিহাস – প্রশ্ন উত্তর । ইতিহাসে ভালো রেজাল্ট করতে হলে অবশ্যই পড়ুন । আমাদের মুঘল সাম্রাজ্য (মধ্যযুগের ভারত) ইতিহাস প্ৰশ্ন ও উত্তর

মুঘল সাম্রাজ্য (মধ্যযুগের ভারত) ইতিহাস – প্রশ্ন ও উত্তর | History Suggestion Question and Answer with FREE PDF Download

WBCS History, School Service History, SSC History, History GK, History Quiz, History QNA, History FAQ, বিভিন্ন পরীক্ষা প্রস্তুতি, রেল, গ্রুপ ডি, এস এস সি, পি, এস, সি, সি এস সি, ডব্লু বি সি এস, নেট, সেট, চাকরির পরীক্ষা প্রস্তুতি, মুঘল সাম্রাজ্য (মধ্যযুগের ভারত) ইতিহাস ,  মুঘল সাম্রাজ্য (মধ্যযুগের ভারত) ইতিহাস প্রসব ও উত্তর, মুঘল সাম্রাজ্য (মধ্যযুগের ভারত) ইতিহাস | History Suggestion PDF, 

  এই “মুঘল সাম্রাজ্য (মধ্যযুগের ভারত) ইতিহাস | History PDF” পোস্টটি থেকে যদি আপনার লাভ হয় তাহলে আমাদের পরিশ্রম সফল হবে। আরোও বিভিন্ন স্কুল বোর্ড পরীক্ষা, প্রতিযোগিতা মূলক পরীক্ষার সাজেশন, অতিসংক্ষিপ্ত, সংক্ষিপ্ত ও রোচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর (All Exam Guide Suggestion, MCQ Type, Short, Descriptive Question and answer), প্রতিদিন নতুন নতুন চাকরির খবর (Job News in Physical Science) জানতে এবং সমস্ত পরীক্ষার এডমিট কার্ড ডাউনলোড (All Exam Admit Card Download) করতে winexam.in ওয়েবসাইট ফলো করুন, ধন্যবাদ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here